বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রতি উপজেলায় সরকারি স্কুল-কলেজ

* সাত প্রকল্প উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর * জ্বালাও-পোড়াও না হলে ঈদযাত্রা আরও স্বস্তির হতো

প্রতি উপজেলায় সরকারি স্কুল-কলেজ

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গতকাল সাত প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত জানুয়ারি থেকে তিন মাসের জ্বালাও-পোড়াও এবং অগ্নিসন্ত্রাসের সমালোচনা করে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ওই সময় বাস, রেল ও লঞ্চ জ্বালিয়ে না দিলে ঈদের ছুটিতে দেশের মানুষ আরও স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারত। প্রধানমন্ত্রী গতকাল গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাতটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনকালে বলেন, বিএনপি ও জামায়াত জনগণের জানমালের যে পরিমাণ ক্ষতি করেছে তা বর্ণনাতীত। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি করে সরকারি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে সরকার। গণভবনে এ অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের,
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সাত উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে- বান্দরবানে থানছি-আলীকদম সড়ক, রংপুর বিভাগীয় সড়কের ১৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীতকরণ, ঢাকায় বিরুলিয়া-আমুলিয়া হাইওয়ে, বিরুলিয়া সেতু এবং রাষ্ট্রীয় খাতে নির্মিত যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি মধুমতি ও দুটি নতুন ফেরি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা ও জাতীয় সম্পদ ধ্বংসের মতো এমন নৃশংসতা কখনো দেখেননি। বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষেই এ ধরনের নৃশংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো সম্ভব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমরা উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়নকাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সড়কে অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক যাতে চলাচল করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুটের ওপর নির্মিত দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বান্দরবানের নবনির্মিত থানছি-আলীকদম সড়কটি উদ্বোধন করেন। এ সময় বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রামের জিওসি সফিকুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুল ওহাব, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রংপুর বরাবরই অবহেলিত ছিল। এ এলাকার মানুষকে মঙ্গার কলঙ্ক মাথায় নিয়ে দিন কাটাতে হতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রংপুরকে মঙ্গামুক্ত করা হয়েছে। তিনি গতকাল গণভবন থেকে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চার লেন সড়ক উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রংপুরকে বিভাগ ও সিটি করপোরেশন করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, মেরিন একাডেমি, আইটি ভিলেজ স্থাপনের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আমরা জনগণের জন্য কাজ করি।
রংপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলনকক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, আহসানুল হক চৌধুরী এমপি, হোসনে আরা ডালিয়া এমপি, শাহানা বেগম এমপি, রংপুর সিটি মেয়র সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু, সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল জলিল, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ন কবীর, জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদসহ আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এম ভি মধুমতির যাত্রা শুরু : কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) এর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত যাত্রীবাহী জাহাজ এম ভি মধুমতি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় গণভবন থেকে সদরঘাট টার্মিনালে বুড়িগঙ্গা নদীতে অবস্থান করা এম ভি মধুমতি জাহাজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। এম ভি মধুমতি ছাড়াও তিনি দুটি ফেরি ভাষাসৈনিক ডা. গোলাম মাওলা ও কুসুম কলি উদ্বোধন করেন। ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফিরোজ রশীদ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেগম জিকরুর রেজা খান, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক, নৌ-পুলিশের ডিআইডি মো. মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে নৌপথকে অবহেলার চোখে দেখা হতো। কিন্তু যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে আরামদায়ক ও সহজ মাধ্যম নৌপথ। নৌপথকে সম্প্রসারণ ও কার্যকর ব্যবহারে বর্তমান সরকার যুগোপযোগী সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় যাত্রীবাহী জাহাজ এম ভি মধুমতি ও দুটি ফেরি উদ্বোধন করা হলো। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে ঈদ। এই সময়ে যাত্রীবাহী একটি জাহাজ ও দুটি ফেরি সংযোজনের ফলে তা যাত্রীসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, তারা যদি বাস না পোড়াত,  লঞ্চে আগুন না দিত, রেলের ওপর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড না চালাত তাহলে আমরা আরও ভালোভাবে যাত্রীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারতাম। বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল নৌপথে স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামদায়ক যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হবে অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি মধুমতি। প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ জাহাজের যাত্রীধারণ ক্ষমতা ৭৫০ জন। জাহাজটি জাপানি শক্তিশালী দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট। বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এটি নির্মাণ করেছে।

সর্বশেষ খবর