রবিবার, ২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

টোল বন্ধের দাবিতে অবরোধ দিনভর ভোগান্তি

টোল বন্ধের দাবিতে অবরোধ দিনভর ভোগান্তি

বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রথম সেতুর ‘অবৈধ টোল’ আদায় বন্ধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছে বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক, শ্রমিক ও চালকরা। গতকাল সকাল থেকে পোস্তগোলায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে অবরোধ চলে। এ সময় মহাসড়কের দুপাশে যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগেও ২৫ জুলাই আদায় বন্ধের দাবিতে এ স্থানে টোল সড়ক অবরোধ করা হয়। কিন্তু দাবি মানতে নারাজ ছিল ইজারাদাররা। তখন সরকারের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও গতকাল সকাল থেকে নতুন করে টোল আদায় শুরু করেন ইজারাদাররা। জানা যায়, এ অবস্থায় গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করেন মালিক, শ্রমিক ও চালকরা। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ পথে আটকা পড়ে যানবাহন। ফলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষসহ যাত্রীরা। এক পর্যায়ে শত শত মানুষ পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, সেতুতে অবৈধ টোল আদায় বন্ধ করতে হবে। শ্রমিক নেতারা সরকারকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। 

ফাইভ স্টার গ্রুপের চাঁদাবাজি : শ্যামপুর-কদমতলীতে ফাইভ স্টার গ্রুপের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ যানবাহনের মালিক, শ্রমিক ও চালকরা। নিয়মিত চাঁদা না দিলে তাদের ওপর নেমে আসছে নির্যাতনের খড়গ। বন্ধ করে দেওয়া হয় গাড়ি। পুলিশ দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিদিন, সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে তারা চাঁদা দিচ্ছেন। এ ছাড়া, হকার্স মার্কেট, মিল-কারখানা, উন্নয়ন কাজের কমিশনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। জানা গেছে, ফাইভ স্টার গ্রুপে রয়েছেন- শ্যামপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আলমগীর মেম্বার, শ্যামপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ ইসলাম শাকিল, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বাবুল আহমেদ (সিএনজি চোরা বাবুল), ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা কাওসার আজম ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মোহাম্মদ জহির। শ্যামপুর-কদমতলী থানা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা জানান, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম ফাইভ স্টার গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করেন।  

রূপসা সেতুর টোল একলাফে দ্বিগুণ : নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা জানান, খানজাহান আলী সেতুর (রূপসা সেতু) টোল একলাফে দ্বিগুণ। এছাড়া এখন থেকে সাইকেল, ঠেলাগাড়ী ও ভ্যান-রিকশাকে টোলের আওতায় আনা হয়েছে। পায়ে চালিত এসব বাহনেরও সেতু পার হলে প্রতিবারে গুনতে হবে ১০ টাকা করে। এর সঙ্গে অন্যসব যানবাহনের আগের টোলও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে বাড়তি এই টোল আদায় করা হচ্ছে। টোল বাড়ার কারণে পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পায়ে চালিত বাহনের টোল নির্ধারণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাধারণ নিুআয়ের মানুষ। প্রতিদিন রূপসা সেতু দিয়ে সাইকেলে চলাচল করেন- ফকিরহাটের লখপুর গ্রামের স্বল্প বেতনের চাকুরে আল আমিন। তিনি বলেন- অল্প বেতনের চাকরি। প্রতিদিন ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে খুলনা শহরে অফিস করি। এখন সেতু পার হতেই দুই বারে দৈনিক ২০ টাকা গুনতে হবে। যা আমার জন্য বোঝা। একই কথা বলেন-কার্তিক মণ্ডল ও মজিবর শেখ। ক্ষোভ প্রকাশ করে ভ্যানচালক সেলিম বলেন- রিকশা-ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। সেখানেও টোল দিতে হবে?
খুলনা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি আবদুল গফ্‌ফার বিশ্বাস বলেন- বাড়তি টোল আদায়ে সেতু ব্যবহারকারীদের ব্যয় দ্বিগুণ বাড়বে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ।
জানা জানা যায়, বর্ধিত টোল অনুযায়ী মোটরসাইকেল ৫ থেকে ১০, মিশুক ও টেম্পো ২০ থেকে ৩০ , কার-জিপ-স্টেশন ওয়াগন ৩০ থেকে ৭৫, ম্যাক্সি মাইক্রোবাস ও পিকআপ ৫০ থেকে ১০০, মিনি ট্রাক ৬০  থেকে ১৫০, বড় বাস ১৫০ থেকে ১৮৫ টাকা, মাঝারি ট্রাক ১৫০ থেকে ২০০, হেভি ট্রাক ১৬০ থেকে ৩০০, নির্মাণ যন্ত্রপাতি ট্যাঙ্কার ও ট্রেইলর ৩০০ এবং ট্রেইলর ও লং ট্রাক ৮৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি কাজে ব্যবহৃত যানের টোল ১২৫ টাকা।
খানজাহান আলী সেতুর টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জিএসআইসি-এসইএল জেভির সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মাহফুজ পারভেজ বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এই টোল বাড়ানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, খানজাহান আলী সেতু দিয়ে বছরে গড়ে প্রায় ২০ লাখ যানবাহন চলাচল করে।

সর্বশেষ খবর