সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

নদী থেকে বালু উত্তোলনে যুবলীগ বিএনপি একাট্টা

নদী থেকে বালু উত্তোলনে যুবলীগ বিএনপি একাট্টা

মির্জাপুরে যুবলীগ ও বিএনপি নেতারা নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে নিচ্ছেন। ফলে নদী-তীরবর্তী ফসলি জমি, বসতঘর, কাঠবাগান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলে সংশ্লিষ্ট জমি ও বাড়ির মালিকদের বালু উত্তোলনকারীরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শনিবার ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে ইদ্রিস মৃধা ও শামছুল মিয়া বালু উত্তোলনকারীদের নাম উল্লেখ করে মির্জাপুর থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন যুবলীগ নেতা আবু সাইদ, বিএনপি নেতা সহিদুর মৃধা, কুব্বত আলী মৃধা, রজব মৃধা, শাহ আলম মৃধা। প্রায় দেড় মাস ধরে এ কাজ চলছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এলাকাবাসী জানান, উপজেলার বংশাই নদীতে বর্ষার পানি আসার পর থেকে মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) যুবলীগ নেতা আবু সাইদ মিয়াসহ অভিযুক্তরা উপজেলার বংশাই নদীর গোড়াইল ও চাকলেশ্বর এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে নিচ্ছেন। গত ২৪ ও ২৬ জুন ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুই বিচারক মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেলিম রেজা খননযন্ত্র ও ট্রলারের ছয়জন এবং মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম আহাম্মেদ ১৪ জনকে দুদফায় ১৫ দিন করে কারাদণ্ড দিলে বালু তোলা বন্ধ থাকে। এক সপ্তাহ পর পুনরায় চারটি খননযন্ত্র দিয়ে প্রতিদিন বালু তোলা শুরু হয়। ফলে নদী-তীরবর্তী ফসলি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকে। বালু উত্তোলনকারীদের ভয়ে এলাকার কেউই মুখ খোলার সাহস পান না। সর্বশেষ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গোড়াইল ও চাকলেশ্বর গ্রামে বংশাই নদী-তীরবর্তী এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা শুরু করলে আরও ফসলি জমি ও কাঠবাগান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ছাড়া দুটি বসতবাড়িও হুমকির মুখে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্তরা এর প্রতিবাদ করলে বালু উত্তোলনকারীরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন। পরে শনিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন দলবদ্ধভাবে খননযন্ত্র ও বালু বহনকারী ট্রলারের মালিকদের ধাওয়া করেন। এতে বালু উত্তোলনকারীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে ক্ষতিগ্রস্তরা সেখান থেকে চলে যান। পরে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে চাকলেশ্বর গ্রামের ইদ্রিস আলী মৃধা ও গোড়াইল গ্রামের শামসুল মিয়া আবু সাইদকে প্রধান বালু উত্তোলনকারী উল্লেখ করে ছয়জনের নামে মির্জাপুর থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেন। শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনকারীদের ধাওয়া করার পর খননযন্ত্র ও বালুবহনকারী ট্রলার ত্রিমোহন এলাকায় অবস্থিত সাইদ মিয়ার নদী-তীরবর্তী ইটভাটার কাছে অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বালু তোলার ফলে নদীতীরে অবস্থিত বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন লাইনের খুঁটিও হুমকিতে রয়েছে। ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুল মিয়ার স্ত্রী রূপভানু বলেন, ‘নদীগর্ভে ঘর যাওয়ার আশঙ্কায় একটি ঘর সকালে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। বাকি বসতঘর, গরু রাখার ঘরটিও সরানোর চেষ্টা করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।’ ইদ্রিস আলী মৃধা জানান, খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলার ফলে তার ৪৫ শতাংশ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া একটি কাঠবাগানের ২৭৫টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নদীগর্ভে যাওয়ায় জমি ও গাছসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর প্রতিবাদ করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আবু সাইদ মিয়া বলেন, ‘আমার কোনো ড্রেজার (খননযন্ত্র) নেই। তিনিসহ বিএনপি নেতা সহিদুর মৃধা, কুব্বত আলী মৃধা, রজব মৃধা, শাহ আলম মৃধা, কালিয়াকৈরের মিলটন, হাটুভাঙ্গা এলাকার কবীর শিকদারসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বালু উত্তোলন করি।’ মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ খবর