সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে পণ্য নিতে চায় টাটা

অনুমতি দিতে চিঠি হাইকমিশনের

ট্রানজিট প্রটোকল সই করার পর প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে স্টিল ও সার পরিবহনের সুবিধা চেয়েছে ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান টাটা গ্রুপ। এ গ্রুপের দুটি কোম্পানি টাটা স্টিল ও টাটা কেমিক্যালস লিমিটেড সম্প্রতি পৃথক চিঠিতে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়েছে।
চিঠিতে টাটা বলেছে, তারা তাদের পণ্য কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে জাহাজযোগে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে আশুগঞ্জ বন্দরে আনবে। এরপর ওই পণ্য আবার ট্রাকে করে বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় পৌঁছাবে। চিঠিতে কী পরিমাণ স্টিল পরিবহন করা হবে তা উল্লেখ না থাকলেও ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার পরিবহনের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে ওই চিঠির সংযুক্তি দিয়ে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে টাটা গ্রুপকে উল্লিখিত পণ্য পরিবহন সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ জানিয়েছে। ২৮ জুলাই ভারতীয় হাইকমিশন স্টিল ও সার পরিবহনের জন্য পৃথক দুটি চিঠি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে টাটা গ্রপ সরাসরি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা চায়।
জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের সংশোধিত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ট্রানজিট প্রটোকল সই হয়। ওই প্রটোকলে বাংলাদেশের নৌ, সড়ক ও রেলপথ ব্যবহারের মাধ্যমে ত্রিপুরাসহ পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে ভারতকে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশকে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহন সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই প্রটোকল অনুযায়ী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পণ্য ট্রানজিটের সুবিধা চেয়েছে টাটা গ্রুপ।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, বাণিজ্য চুক্তির আওতায় এর আগে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (আইডব্লিউটিটি) সংক্রান্ত প্রটোকল ছিল, সে অনুযায়ী কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করা যেত। সংশোধিত প্রটোকলে নৌপথ ব্যবহার ছাড়াও রেল ও সড়কপথ ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে প্রটোকল সইয়ের পর এখনো যেহেতু ট্রানজিট সুবিধা বাস্তবায়নের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) চূড়ান্ত হয়নি, সে কারণে টাটা যে সুবিধা চেয়েছে তা এখনই দেওয়া যাবে না। জানা গেছে, আইডব্লিউটিটি প্রটোকল সংশোধনের আগেও আশুগঞ্জ বন্দর থেকে সড়কপথে আখাউড়া বন্দর দিয়ে একাধিকবার খাদ্য পরিবহন করেছে ভারত। এ ছাড়া ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে শক্তিশালী মোটর ইঞ্জিনও পরিবহন করা হয়েছে এ পথে। কর্মকর্তারা জানান, ভারতকে খাদ্য পরিবহনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল মানবিক কারণে। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারী যন্ত্রাংশ পরিবহন করতে দেওয়া হয়েছিল ওই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে এ শর্তে। এর সঙ্গে টাটার পণ্য পরিবহনের বিষয় মিলিয়ে দেখা যাবে না। টাটা পণ্য পরিবহন করতে চাইছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। এ সুবিধা দিতে হলে দুই দেশের ট্রানজিট প্রটোকল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসওপি চূড়ান্ত করতে হবে আগে। ওই এসওপিতে ট্রানজিটে পণ্য পরিবহনের বিপরীতে বাংলাদেশ কী পরিমাণ ফি বা চার্জ পাবে তার উল্লেখ থাকবে। কোন কোন রোড কীভাবে ব্যবহার করা যাবে তারও উল্লেখ থাকবে এতে। এ ব্যাপারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট-সংক্রান্ত যেসব প্রটোকল সই হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য এসওপি চূড়ান্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ জন্য শিগগিরই ঢাকায় দুই দেশের জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক বসবে। বৈঠকে ট্রানজিট-সংক্রান্ত যাবতীয় পরিচালন পদ্ধতি ঠিক করা হবে। এরপর আগামী মাসের শেষ দিকে দিল্লিতে দুই দেশের নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠকে চূড়ান্ত হবে এসওপি।

সর্বশেষ খবর