সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা
জঙ্গি অর্থায়ন

জবানবন্দি দিলেন তিন আইনজীবী

হেফাজতে ইসলামের মামলা পরিচালনার জন্য অর্থায়ন করেছে জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেড (এসএইচবি)। এমন তথ্যই উঠে এসেছে জঙ্গি অর্থায়নে অভিযুক্ত গ্রেফতার তিন আইনজীবীর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে। চট্টগ্রাম বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদ হোসেনের আদালতে গতকাল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবী। তবে তারা এসএইচবিকে অর্থায়নের কথা অস্বীকার করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ধর বলেন, ‘জবানবন্দিতে তিন আইনজীবী মনিরুজ্জামান ডনের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তারা হেফাজতে ইসলামের মামলা পরিচালনার জন্য ডনের কাছ থেকে এ অর্থ নিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। কিন্তু ডন তো হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি হামজা ব্রিগেডের নেতা।’
এদিকে হামজা ব্রিগেডের অর্থায়নে মামলার ব্যয় নির্বাহ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাঈনউদ্দিন রুহী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তারা বলেন, ‘ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ গ্রেফতার তিনজন আমাদের আইনজীবী ছিলেন না। তাই হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের প্রশ্নই আসে না।’ আদালত সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মামলা পরিচালনার জন্য টাকা নেন ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবী। কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে তাদের জামিন নিতে ব্যর্থ হওয়ার পর হেফাজত ইসলাম নেতারা টাকাগুলো ফেরত দিতে বলেন। পরে ওই টাকা তারা কয়েক দফায় মনিরুজ্জামান মাসুদ ওরফে ডনের ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের হিসাব নম্বরে ফেরত দেন। আর এসব টাকা তাদের দিয়েছেন ওসমান আমিন নামে এক ব্যক্তি। এ ছাড়া জবানবন্দিতে তিনজনই এক বড় ভাইয়ের কথা উল্লেখসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, জঙ্গি অর্থায়নের জন্য তারা কাউকে কোনো অর্থ দেননি। জবানবন্দিতে তিন আইনজীবী হেফাজতে ইসলামের মামলা শুরু থেকে পরিচালনা, বিভিন্ন সময় অর্থ নেওয়া, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, সর্বশেষ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
গতকাল সকালে বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদ হোসেনের খাস কামরায় জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের অভিযোগে অভিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবীকে আনা হয়। এরপর আইনজীবী মো. হাসানুজ্জামান লিটন, মাহফুজ চৌধুরী বাপন ও ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা একে একে জবানবন্দি দেন।আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, ‘জবানবন্দির পর তাদের জামিনের আবেদন করেছিলাম। বিচারক তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
 তিন আইনজীবীকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করা হলে বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন।’
আরও মামলা : শহীদ হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের দায়ে গ্রেফতার ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবীকে আরও একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিচ্ছে র‌্যাব। আজ এ মামলায় তাদের গ্রেফতার ও রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে। র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হাটহাজারী থেকে যারা গ্রেফতার হয়েছিল তাদের সঙ্গে তিন আইনজীবীর যোগাযোগের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। ওই মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাদের হাটহাজারী থানার মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম জেলা পিপি আবুল হাসেম বলেন, ‘তিন আইনজীবীকে হাটহাজারীর মামলায় গ্রেফতার ও পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে র‌্যাব। আগামীকাল (আজ) এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’
জানা যায়, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী এলাকায় ‘আল মাদরাসাতুল আবু বকর’ নামে একটি কওমি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওই অভিযানের মাধ্যমেই জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সন্ধান পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, জঙ্গি কার্যক্রমে এক কোটি আট লাখ টাকা জোগান দেওয়ার অভিযোগে সাবেক হুইপ এবং বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবী ১৮ আগস্ট গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ নিয়ে এসএইচবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ জঙ্গি সংগঠনটিকে কারা আর্থিক সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা করত সে ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর