মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সুপারমুনে তোলপাড় বিশ্বজুড়ে

প্রতিদিন ডেস্ক

সুপারমুনে তোলপাড় বিশ্বজুড়ে

প্রতিদিনের চেয়ে আকারে চোখে পড়ার মতোই বড়। আর গায়ে লালচে আভা। আকাশে দেখা মিলেছে ‘সুপারমুন’ নামে পরিচিত এক হৃষ্টপুষ্ট চাঁদের। একই সময়ে চন্দ্রগ্রহণ এবং সারা বছরের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা পূর্ণিমার চাঁদ-এ দুটি বিরল মহাজাগতিক ঘটনার সমন্বয়েই উপগ্রহটির রং ও আকারে এই পরিবর্তন। আর তা দেখার জন্য সাড়া পড়েছে বিশ্বজুড়ে শখের আকাশ পর্যবেক্ষণকারীদের মধ্যে। খবর রয়টার্সের।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রবিবার রাত থেকে শুরু হয় সুপারমুনের উপস্থিতি। কোথাও কোথাও গতকালও এর দেখা মেলার কথা।

স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল এই চাঁদ। আকাশপ্রেমীরা উচ্ছ্বসিত ‘সুপারমুন’ দেখতে পেয়ে। চন্দ্রগ্রহণের কারণে চাঁদের এমন অবস্থা হয়ে থাকে। এর আরও নাম রয়েছে। যেমন ‘ব্লাড মুন’। তবে এবারের চন্দ্রগ্রহণ বাংলাদেশের মানুষ দেখতে পাননি। ফলে ‘ব্লাড মুন’ দেখেছেন কেবল পশ্চিম গোলার্ধের অধিবাসীরাই। সুপারমুন হচ্ছে চাঁদের একটি দশা বা অবস্থা। চাঁদ যখন পৃথিবীর খুব কাছে অবস্থান করে, তখন চাঁদকে পৃথিবী থেকে তুলনামূলক অনেক বড় আর উজ্জ্বল দেখায়। পূর্ণ গোলাকার চাঁদের এ অবস্থাকে সুপারমুন বলা হয়। সুপারমুনের কোনো প্রচলিত বাংলা নেই। এটিকে অনেকে ‘অতিকায় চাঁদ’ বলে থাকেন। সুপারমুন শব্দটির উৎপত্তি আধুনিক জ্যোতিঃশাস্ত্রে। তবে জ্যোতির্বিদ্যার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র নেই। চন্দ্র-সূর্যের অবস্থানগত কারণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা হয়। সুপারমুনের কারণে পৃথিবীতে ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এখনো এ ধরনের কোনো দুর্যোগের সংবাদ পাওয়া যায়নি। ১৯৯৩ সালের সুপারমুন সাধারণ চাঁদ থেকে ২০ গুণ অধিক উজ্জ্বল এবং ১৫ গুণ বড় ছিল। পৃথিবী থেকে সুপারমুন বা অতিকায় চাঁদ সর্বশেষ দেখা গেছে ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪। এ দিন রাত ১২টা ১০ মিনিটে চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে। এর আগে ১০ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সুপারমুন দেখা যায়। সুপারমুনের বিপরীত দশা মাইক্রোমুন। অর্থাৎ চাঁদের অতিকায় ক্ষুদ্র অবস্থাকে মাইক্রোমুন বলা হয়ে থাকে। সুপারমুনের রাতে জোছনায় প্লাবিত হয় পৃথিবী। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আকাশ পরিষ্কার থাকা সাপেক্ষে ‘সুপারমুন’ ও ‘ব্লাড মুন’ এবার উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি অংশ এবং পূর্বাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় দৃশ্যমান হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রবিবার রাত ৮টা ১১ মিনিটে (পূর্বাঞ্চলীয় সময়) চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়। পূর্ণগ্রাস হয় দুই ঘণ্টা পর এবং তা চলে এক ঘণ্টা ১২ মিনিট। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানায়, একই সঙ্গে ‘সুপারমুন’ ও পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা এবার ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর ঘটেছে। সংস্থাটি এও জানিয়েছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত আর কোনো পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে না। আর একই সঙ্গে ফের সুপারমুন-চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে ২০৩৩ সালে। রবিবার রাতে চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের অনন্য সাদা আভা ধীরে ধীরে লালচে রং নেয়। এই রং বদলের কারণ, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সূর্যালোকের বিক্ষেপণ। সুপারমুনের টেকনিক্যাল নাম হচ্ছে ‘পেরিজি মুন’। পেরিজি অর্থ ‘পৃথিবীর নিকটতম’। আর মাইক্রোমুনের টেকনিক্যাল নাম হচ্ছে অ্যাপোজি মুন। অ্যাপোজি অর্থ ‘পৃথিবীর দূরতম’। চাঁদ সম্পূর্ণ গোলাকার নয় বলে পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৯ হাজার ৯০০ কিলোমিটার কম-বেশি হয়। আর একমাত্র এ উপগ্রহটি প্রতি ২৭ দিন অন্তর পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের যে বিন্দুতে (পেরিজি) চাঁদ আসে, এর দূরত্ব তিন লাখ ৬৩ হাজার ১০৪ কিলোমিটার। আর সবচেয়ে দূরে (অ্যাপোজি) যে বিন্দুতে চাঁদ অবস্থান করতে পারে, তার দূরত্ব চার লাখ ছয় হাজার ৬৯৬ কিলোমিটার। পেরিজির সময় চাঁদ ও পৃথিবীর দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম হয়, তখনই ঘটনাচক্রে পূর্ণিমা হলে চাঁদকে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় ও উজ্জ্বল দেখায়। এটিই ‘সুপারমুন’। রবিবারের সুপারমুন বিশেষ ছিল এ কারণে যে এটি পৃথিবীর দুই লাখ ২১ হাজার ৭৬৫ মাইলের মধ্যে চলে এসেছিল। পাশাপাশি এ সময় ‘পারসেইড’ উল্কাবৃষ্টির বিষয়টিও লক্ষ করা গেছে। প্রতিবছর আগস্ট মাসে এই উল্কাবৃষ্টি হয়। সুপারমুনের সঙ্গে উল্কাবৃষ্টির একটি অপার্থিব ঘটনা ঘটেছে এবার। প্রশ্ন উঠেছে, সুপারমুনের ফলে কি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে? গবেষকেরা বলছেন, এ আশঙ্কা কম। তবে ডেইলি এক্সপ্রেসের এক খবরে দাবি করা হয়েছে, ‘বিরল এই সুপারমুনের ঘটনা পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।’ এর  আগে এ বছরের ১০ আগস্ট সর্বশেষ সুপারমুন দেখা গিয়েছিল। তবে এক বছরে তিনবার সুপারমুনের দেখা পাওয়ার ঘটনা বিরল। ২০৩৪ সালের আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। তবে সাধারণত প্রতি ১৩ মাস পর পর সুপারমুনের দেখা পাওয়া যায়। তাহলে আগামী সুপারমুন কবে হতে পারে? এমন প্রশ্ন এসে গেছে জ্যোতির্বিদদের সামনে। এর জবাবে তারা বলছেন, ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর। আর এরপর হবে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি।

 

সর্বশেষ খবর