শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পদ্মা পাড়ে সাজসাজ রব  

কাজ পরিদর্শনে যাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা, আগামী মাসে মূল কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

লাবলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ

পদ্মা পাড়ে সাজসাজ রব

 

বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো প্রকল্পের কাজ দেখতে দেশের সব মন্ত্রণালয়ের সচিবরা একযোগে প্রকল্প এলাকায় জড়ো হচ্ছেন। আজ দুপুরে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্তে সচিবরা পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি এবং সার্বিক বিষয় পরিদর্শন করবেন।

মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সচিবালয়ের সব মন্ত্রণালয়ের সচিবরা (প্রায় ৮৬ জন সচিব) সকাল ১০টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে নিজস্ব মাসিক সভা করবেন এবং সভা শেষে দুপুরের দিকে তারা সেতু প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করবেন। এদিকে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিতে এই প্রথম পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণকাজের তদারকিতে চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ড্রোন ব্যবহার করছে। পদ্মা সেতুর অন্যতম পরামর্শকের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম এই সেতুটি চালু করার লক্ষ্যে এখানে এক দল চীনা প্রকৌশলীর সঙ্গে রয়েছে আরেক দল বাংলাদেশি প্রকৌশলী। পদ্মা সেতুর টেকনিক্যাল পরামর্শক বিশেষজ্ঞ প্যানেল অব এক্সপার্ট, দক্ষ দেশি-বিদেশি প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মাসে পদ্মা সেতুর মূল কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ঘোষণায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা পাড়ের মানুষের মাঝে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মাওয়া প্রান্তে সাজ সাজ রব চলছে। যদিও অনানুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর কাজ গত বছরের নভেম্বরে শুরু হয়েছে কিন্তু এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এ প্রকল্পের প্রায় ২৫ শতাংশেরও বেশি কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অক্টোবরের মধ্যে ট্রায়াল পাইলের কাজ শেষ হবে। মূল সেতুর ৪০টি স্প্যানের মধ্যে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে একটি দৃশ্যমান হবে। এদিকে নদী তীরের খাড়া অংশে এবং নদীর তলদেশে বালিভর্তি জিও ব্যাগ এবং পাথর যথাযথভাবে স্থাপন নিশ্চিত করতে ৫ জন ডুবুরি নিয়োগ করা হবে। ৪২টি পিলারের ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্ববৃহৎ এই সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। দুই তলা এ সেতুর নিচতলা দিয়ে রেল ও ওপর তলা দিয়ে যানবাহন চলবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ড্রোনের সাহায্যে তদারকির কাজ চলছে। ফড়িং আকৃতির প্রায় দুই ফুট দীর্ঘ ও দুই ফুট প্রস্থ  ড্রোনটিতে পাখা রয়েছে চারটি। এতে বসানো আছে হাই  রেজুলেশন ক্যামেরা, যা দিয়ে নির্মাণকাজের স্থির ও ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করা হয়। নির্বাহী প্রকৌশলী (পু:বা) তোফাজ্জেল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে বিভিন্ন অংশে দেশি বিদেশি নিয়মিত ও অনিয়মিত প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। এ সেতু নির্মাণে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ হওয়ার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে ক্ষেত্র বিশেষে দুই/তিন শিফ?টে কাজ চলছে এবং নদী শাসনের কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। নদী শাসনের দায়িত্বে রয়েছেন চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর মূল নির্মাণকাজের জন্য চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুই পারে সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যৌথভাবে আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার হাইওয়ে কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট কাজ করছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ  কোরিয়ার কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর