বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আইএমএফ খুশি একসঙ্গে দিচ্ছে দুই কিস্তি  

২৮ কোটি ডলার পাওয়া যাবে চলতি মাসেই

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের সব শর্ত পূরণ করায় বাংলাদেশের ওপর খুশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তাই বর্ধিত ঋণসুবিধার (ইসিএফ) শেষ দুই কিস্তির অর্থ  একসঙ্গে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী গতকাল রাতে সংস্থাটির বোর্ডসভায় বাংলাদেশের কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন হওয়ার কথা। এটি হলে চলতি মাসের মধ্যে দুই কিস্তির অর্থ বাবদ ২৮ কোটি মার্কিন ডলার বাংলাদেশের অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে।

যোগাযোগ করা হলে গতকাল সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘২১ অক্টোবর তাদের বোর্ডসভায় বিষয়টি উঠছে। তাদের ওখানে সকাল মানে আমাদের এখানে রাত। এর মানে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে বৈঠক শুরু হচ্ছে। বিষয়টি পাস হলে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে আমরা অর্থ পেয়ে যাব বলে আশা করছি।’

সচিব জানান, ‘সম্প্রতি পেরুর রাজধানী  লিমায় অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভায় ইসিএফের শেষ দুই কিস্তি ছাড় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা সন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছে, ইসিএফ প্রোগ্রামটি বাংলাদেশে সফল হয়েছে। তাদের দেওয়া সংস্কার কার্যক্রম আমরা সম্পন্ন করেছি। ফলে দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।’

২০১২ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের জন্য বর্ধিত ঋণ সহায়তার (ইসিএফ) হিসেবে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ এসডিআর অনুমোদন করে আইএমএফ। সে সময় জ্বালানির দাম বাড়ানো, নতুন ভ্যাট আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমাসহ আর্থিক খাতের বিভিন্ন সংস্কারের শর্ত জুড়ে দেয় আইএমএফ। চুক্তির প্রায় সব শর্ত পূরণ করা হলেও ইসিএফ সহায়তার শেষ দুই কিস্তির অর্থ আটকে দেওয়া হয় নতুন আরেক শর্তে। আইএমএফের দাবি ছিল, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সমুদয় হিসাব বিদেশি অডিট ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষা করাতে হবে। এ নিয়ে শুরু হয় জটিলতা। ১৫ জুলাই সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বর্ধিত ঋণ সহায়তার (ইসিএফ) শেষ দুই কিস্তির অর্থ সরকার নেবে না। এ অর্থ না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আইএমএফ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জন্য আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম নিয়োগের শর্ত দিয়েছিল। কিন্তু দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেখানে স্থানীয় অডিট ফার্ম অডিট করছে, সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আইন পরিবর্তন করতে আমি রাজি নই। এ কারণে আইএমএফের ইসিএফের শেষ দুই কিস্তির অর্থ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’ তবে সরকারের শীর্ষ পর‌্যায়ের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত বিপিসির আইনে সংশোধনী আনতে সম্মত হয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ২১ জুলাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের কাছ থেকে ইসিএফের শেষ দুই কিস্তির ২৮ কোটি মার্কিন ডলার বাংলাদেশ নিচ্ছে। এ অর্থ চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে অর্থ সচিব বলেন, সরকারি সংস্থা বিপিসির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই বিদেশি ফার্ম দিয়ে অডিট করানো হচ্ছে। বিপিসির অডিট-সংক্রান্ত আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। আগামী সংসদে এটি পাসের জন্য জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে আইএমএফের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর