শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চাঁদার টাকায় কক্সবাজার ট্যুরে ডাক্তাররা!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

‘চাঁদা দাও, নইলে আগামী ছয় মাস হাসপাতাল নিষিদ্ধ’- কক্সবাজার ভ্রমণের টাকা আদায় করতে স্থানীয় ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের উদ্দেশে এমন কথা বলেন সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. নোমান মিয়া। চাঁদার পরিমাণ সর্বনিম্ন ৩০ হাজার আর সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। ১০টি কোম্পানির প্রতিনিধির কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে এ চাঁদা। ৩০ হাজার করে দিয়েছে ছয়টি কোম্পানি। ৫০ ও ৪০ হাজার দিয়েছে দুটি কোম্পানি। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত মার্কেটিংও রয়েছে এ বাজেটে। তবে চাঁদাদাতা কারও  ভ্রমণের সুযোগ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী ও ওষুধ কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৮ জন চিকিৎসক বুধবার গভীর রাতে রওনা করেছেন কক্সবাজার ভ্রমণে। বিলাসবহুল শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সাকুরা পরিবহনের একটি কোচে করে যাচ্ছেন চিকিৎসক দল। সঙ্গী হয়েছেন পরিবারের ৪০ জন। ঘুরবেন সেন্ট মার্টিনও। হাসপাতাল এখন ফাঁকা। চাঁদা আদায়ের দায়িত্ব পালন করেন ডা. মো. নোমান মিয়া। প্রথম সারির ১২টি কোম্পানিকে টার্গেট করে ভ্রমণ বিনোদনের চাঁদা উত্তোলন করা হয়। চাঁদা আদায়ে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয় এমআরদের (মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ)। বিক্রির ক্ষেত্রে ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রতিনিধিরা ৫০ হাজার, ‘বি’ ক্যাটাগরি ৪০ হাজার ও ‘সি’ ক্যাটাগরি বা নিচের সারিতে থাকা প্রতিনিধিরা ৩০ হাজার টাকা। যারা টাকা দেবেন না, তারা আগামী ছয় মাস হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবেন না। আবার চাঁদাদাতা কেউ ভ্রমণে যাওয়ার দাবি তুলতে পারবেন না। চাঁদা দাতাদের আগামী ছয় মাস দেওয়া হবে বিশেষ সুবিধা। তাই চাকরি বাঁচানোর জন্য ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই দ্রুত জমা দেন চাঁদার টাকা। টাকার বদলে ৪০টি গেঞ্জি ও ৪০টি ক্যাপ দিতে হয়েছে এক কোম্পানিকে। সেখানে খেলার জন্য একটি ফুটবল আদায় করা হয়েছে ছোট একটি কোম্পানির প্রতিনিধি থেকে। ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির প্রতিনিধি চাঁদা দেওয়ার ভয়ে এক সপ্তাহ হাসপাতালে প্রবেশ করেননি। তার পরও চাকরি বাঁচানোর জন্য ঋণ করে চাঁদা দিয়েছেন কেউ কেউ। চাঁদার টাকা হাতে পেয়ে আবাসিক চিকিৎসক কোম্পানির ব্যবস্থাপকদের ধন্যবাদপত্রও দিয়েছেন। পত্রে ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। চাঁদা বুঝে পেয়ে লিখিত টোকেনও দিয়েছেন অনেককে। চাঁদা না দেওয়ায় হাসপাতালের সাবেক এক চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে ডা. নোমান মিয়া এসকেএফের ওষুধ লিখতে নিষেধ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওষুধ কোম্পানির স্থানীয় একাধিক প্রতিনিধি বলেন, সম্প্রতি হাসপাতালের একটি দেয়াল নির্মাণে দুটি কোম্পানির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন চিকিৎসকরা। কক্সবাজারে গিয়ে কাপড়-চোপড়ও আমাদের টাকায় কিনতে হবে। টাকা তো কম কামান না। গেঞ্জি পরবেন, তা-ও দিতে হবে কোম্পানিকে। আবার কোম্পানির নাম লেখা যাবে না। এ বিষয়ে তাদের অভিমত জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. হাসিনা আখতার বেগম ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. নোমান মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাসিনা আখতার বলেন, ‘তাদের কক্সবাজার যাওয়ার বিষয়টি আমি জানি। তবে এমআরদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। অফিস খোলার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখব। চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অবশ্যই নীতিবহির্ভূত।’

সর্বশেষ খবর