বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

গরিবের চিকিৎসা নেই পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

গরিবের চিকিৎসা নেই পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে

সমস্যা জর্জরিত পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল। চিকিৎসক, নার্স, অফিস স্টাফ, ওষুধ, অপারেশন যন্ত্রপাতি, রোগীদের শয্যা প্রয়োজনীয় কোনো কিছুই নেই এ হাসপাতালে। চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ রোগী। এর মধ্যে অর্ধেকই শিশু। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে হাজার হাজার রোগীকে যেতে হচ্ছে দিনাজপুর, রংপুর অথবা ঢাকায়। বিশেষ করে এ অঞ্চলের শিশুরা কোনো সেবাই পাচ্ছে না এ হাসপাতালে।

জানা গেছে, অবহেলা আর দায়িত্বহীনতায় হাসপাতালে চিকিৎসা ও সেবার বিপর্যয় ঘটেছে। বিশেষ করে নার্সদের খারাপ আচরণ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দরিদ্র রোগীদের মাঝে বাসি ও পচা খাবার পরিবেশন চলছে নিয়মিত। সময়মতো খাবারও দেওয়া হয় না। অনেক সময় বিকালের খাবার দেওয়া হয় না। দুর্গন্ধ, অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার, বিছানা, যেখানে-সেখানে ময়লা- আবর্জনা হাসপাতালের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে। ডাক্তার ও নার্সদের উদাসীনতা, ওষুধের অভাব, সরবরাহ নেই মানসম্পন্ন খাবার। চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগী জানালেন, যারা একটু সচেতন তারাই ঠিকমতো সেবা পায়, এ হাসপাতালে গরিবের চিকিৎসা নেই। হাসপাতালে প্রতিদিন ২০০ নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। শয্যার অভাবে রোগীর চিকিৎসা নিতে হয় বারান্দা অথবা মেঝেতে। রাতের বেলা ডাক্তার বা নার্স কোনোটাই পাওয়া যায় না। সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালটি ১৯৯৪ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ৩৬টি চিকিৎসকের পদ  থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৮ জন। নার্সিং সুপারভাইজার রহিমা বেগম জানান, নার্সের পদ ৩৬। কর্মরত আছেন ২২ জন। এর মধ্যে ডেপুটেশনে আছেন ৭ জন। রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। কর্মচারীও ঠিকমতো নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তিনটি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে ২টি নষ্ট, আলট্রাসনোলজিস্ট না থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে, ডেন্টাল চেয়ার নেই বহুদিন, আইএমসিআই কর্নারের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, প্যাথলজি বিভাগের দোতলার টয়লেটের পানি নিচতলায় চলে আসে, হাসপাতাল ক্যাম্পাস থেকে ময়লা- আবর্জনা ও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু পুরনো একটি  অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ৪০ কিলোমিটারের ওপর যেতে পারে না। নিজস্ব কোনো চালকও নেই।  এদিকে গাইনি কনসালটেন্ট নেই। অথচ প্রতি মাসে ডেলিভারি হয় ৬০-৬৫টি এবং সিজার করতে হয় ৭৫-৮০টি। মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ কোনো মতে চালিয়ে যাচ্ছেন। শীতকালে  প্রতিদিনই শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এসব শিশুর একশ ভাগই দরিদ্র।  সাতমেরা গ্রামের সাথী আক্তার জানান, টাকার অভাবে নবজাতক শিশুকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করাতে পারছি না। এখানে দিনে ডাক্তার আসেন মাত্র একবার। অন্য সময় ডাক্তার ডাকলে পাওয়া যায় না। বয় আর নার্সরাই ডাক্তারের কাজ করেন। চক্ষু, চর্ম, শিশু, নাক, কান, গলা ও রেডিওলজিস্ট বিশেষজ্ঞ নেই। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইউ এফ পি এ এবং ইউনিসেফের অর্থায়নে পরিচালিত মাতৃ ও নবজাতক শিশু স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমটিও বন্ধ হয়ে যাবে আগামী ডিসেম্বরে। এ কার্যক্রমটি বন্ধ হয়ে গেলে স্বাস্থ্যসেবায় চরম অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ১৮ লাখ টাকার আইসিইউ ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার যন্ত্র) যন্ত্রটি ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ এ যন্ত্রটি চালানোর লোকবল এবং আইসিইউ ইউনিট কেয়ার নেই। যন্ত্রটির সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্যান্য যন্ত্রপাতিও দেওয়া হবে কিনা তাও জানেন না কর্তৃপক্ষ। প্রস্তুতি ছাড়াই জেলা শহরের একটি হাসপাতালে কেন এত বড় যন্ত্র দেওয়া হলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরই তা বোধগম্য নয়। এ ছাড়া জেলায় ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ৫টি হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর অবস্থা মুমূর্ষু রোগীর মতোই। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৫৪ চিকিৎসকের পদের  মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৭৪ জন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো চিকিৎসকই থাকতে চান না। যোগদান করলেও  কিছুদিন পর বদলি নিয়ে চলে যান অন্যত্র। বছরের পর বছর ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। চিকিৎসকদের ইচ্ছে অনুযায়ী সবকিছু হচ্ছে। হাসপাতালে  কর্মরত ডা. মনসুর আলম বলেন, প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় মাঝে মাঝে সমস্যা হয়। সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। তবে ওষুধ দেওয়া হয় না অভিযোগ সঠিক নয়। সিভিল সার্জন আহাদ আলী বলেন, সংকট ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সমস্যার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট, চিকিৎসকসহ লোকবল প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর