শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদন

দুরারোগ্য রোগে বেশি আক্রান্ত গরিবরাই

জিন্নাতুন নূর

বাংলাদেশে ক্যান্সার, ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপের মতো দুরারোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হয়ে ধনীদের তুলনায় দরিদ্রদের মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য দরিদ্রদের যেসব উপকরণ ও খাদ্যাভ্যাস প্রয়োজন তা মেটাতে তারা সক্ষম নন। বাংলাদেশে আশির দশক থেকে গরিব রোগীদের দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এপিডেমোলজিতে ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, ১৯৮২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে দুরারোগ্য রোগে ধনীদের আক্রান্ত হওয়ার হার ২০ শতাংশ কমেছে, অন্যদিকে ২০ শতাংশ দরিদ্রদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। যদিও অল্প বয়সী শিশুদের সংক্রমিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যহার কমেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অনুন্নত জীবনযাপনের কারণে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে গরিব মানুষের মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্লুমবার্গ স্কুলের অধ্যাপক এবং গবেষণা প্রধান ডেভিড পিটার জানান, এ গবেষণায় নিম্ন ও মধ্যআয়ের দেশগুলোর ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়। তার মতে, দরিদ্রদের প্রতি বিশেষ করে বাংলাদেশের দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত গরিব জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এটি শুধু আক্রান্ত ব্যক্তিরই ক্ষতি করবে না বরং তার পুরো পরিবারকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বাংলাদেশের চাঁদপুরের মতলব উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে গবেষক দল তথ্য জোগাড় করে। আইসিডিডিআরবি’র মাধ্যমে এ গবেষণা পর্যবেক্ষণ করা হয়। দুই লাখ ২৫ হাজার মানুষের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৮২ থেকে শুরু করে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে দুরারোগ্য রোগে মৃত্যুহার প্রতি লাখে ৬৪৬ থেকে ৬৭০ ছিল ধনীদের ক্ষেত্রে। এই হার ২০ শতাংশ কমে যায়। একই সময়ে এ ধরনের রোগে গরিবদের আক্রান্তের হার ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। প্রতি লাখে তা ৫৪৬ থেকে ৭৫২ তে দাঁড়ায়। গবেষকরা দেখতে পান, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তের ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক অবস্থা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের কোনো সদস্য যদি এই দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন। তবে সে পরিবারের আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেটিক্স অ্যান্ড এভালুয়েশনের করা আরেকটি ‘দ্য গ্লোবাল বার্ডেন অব ক্যান্সার-২০১৩’ শীর্ষক বৈশ্বিক জরিপ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের রোগীদের জন্য ক্যান্সার এখন একটি সতর্কতা। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে নারী-পুরুষ উভয়েরই ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দরিদ্রতা, অপুষ্টি, পরিবেশ দূষণসহ নানা কারণে দেশে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়া ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম জানান, দেশে ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো নয়। সামর্থ্যবানরা ভারত, ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসার সুযোগ পেলেও গরিব রোগীরা বিভাগীয় হাসপাতাল থেকে ক্যান্সারের চিকিৎসা করান। সেখানে তারা পর্যাপ্ত সেবা পান না।

সর্বশেষ খবর