সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান নেই। হেভিওয়েট নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। সিলেট বিএনপির সাবেক সভাপতি, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) আরিফুল হক চৌধুরী সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় জেলে। এ অবস্থায় শমসের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে সিলেট বিএনপি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন সিলেটের নেতারা। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তারা কেন্দ্রের পাশাপাশি সিলেটের রাজনীতিতেও মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ভ‚মিকা রাখছিলেন। জনপ্রিয় ও আলোচিত নেতাদের মৃত্যু, নিখোঁজ, আÍগোপন ও পদত্যাগের কারণে কেন্দ্রের রাজনীতিতে এখন নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে সিলেট। এই নেতৃত্বশূন্যতা দীর্ঘদিনেওপূরণ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন দলের নেতারা। কেন্দ্রে নেতৃত্বশূন্যতার সংকট সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে এমন ধারণা সিলেটের নেতাদের। বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে একসময় দাপটের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন খন্দকার আবদুল মালিক, এম সাইফুর রহমান, আবুল হারিছ চৌধুরী, শমসের মবিন চৌধুরী, এম ইলিয়াস আলী। এর সঙ্গে সিলেটে বিএনপির রাজনীতির অন্যতম নেতা ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। কেন্দ্রের রাজনীতির পাশাপাশি তারা সিলেটে দলের কাণ্ডারির ভ‚মিকা পালন করেন। তাদের হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য নেতা-কর্মী। এসব নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন রাজনীতিতে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগেরই রাজনীতির পরিধি জেলা ও মহানগর পর্যন্ত। ফলে নানা কারণে জনপ্রিয় এসব নেতার অনুপস্থিতি সিলেটে নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি করেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অনেকটা অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে সিলেট। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন খন্দকার আবদুল মালিক। সিলেট-১ আসনের (সদর-কোম্পানীগঞ্জ) দুবারের সংসদ সদস্যও ছিলেন তিনি। সিলেটে বিএনপির বীজ তার হাত ধরেই বপিত হয়েছিল। একপর্যায়ে খন্দকার মালিকের হাত থেকে সিলেট বিএনপির নেতৃত্ব চলে যায় সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম সাইফুর রহমানের হাতে।
সিলেট-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সাইফুর রহমান দাপটের সঙ্গেই সিলেট বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তখন বেশ শক্তিশালী অবস্থায় ছিল সিলেট বিএনপি। তিনি নেতৃত্বে থাকাকালে ধীরে ধীরে সামনের কাতারে চলে আসেন আবুল হারিছ চৌধুরী ও এম ইলিয়াস আলী। আবুল হারিছ চৌধুরী ঢাকায় বসেই সিলেটের রাজনীতিতে মেকানিজম করতেন। আর ইলিয়াস আলী ছিলেন রাজপথের নিয়ন্ত্রণকর্তা। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর সিলেট বিএনপির পুরোপুরি হাল ধরেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। নেপথ্যে থেকে তাকে সহযোগিতা করেন হারিছ চৌধুরী। ওয়ান-ইলেভেনের পর হারিছ চৌধুরী দেশ ছেড়ে পালান। হারিছ চৌধুরী এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা কারও জানা নেই। ওয়ান-ইলেভেনের পর বিধ্বস্ত দলকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব পান এম ইলিয়াস আলী। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। তার নেতৃত্বের ছোঁয়ায় ঝিমিয়ে পড়া বিএনপি নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে খালেদা জিয়ার লংমার্চ-পরবর্তী সমাবেশে লাখো মানুষের সমাগম ঘটান তিনি। কিন্তু ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ তিনি নিখোঁজ হন। এর পর থেকে সিলেট বিএনপিতে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। ইলিয়াস নিখোঁজের পর সিলেট বিএনপির হাল ধরার চেষ্টা করেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। সিলেটে বিএনপির একটি বড় অংশকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে তিনি পদত্যাগ ও রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে সিলেট। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সদস্য ছাড়া বিএনপির সম্পাদকীয় পদে সিলেটি নেতা হিসেবে রয়েছেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন। সজ্জন এই নেতা দলের বিভিন্ন দুঃসময়ে সিলেটের রাজনীতির হাল ধরতে চেয়েছেন। কিন্তু নেতা-কর্মীদের মধ্যে সাড়া ফেলতে সক্ষম হননি তিনি। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘জাতীয় রাজনীতিতে যারা সিলেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাদের নিয়ে আমরা সব সময় গর্ব করি। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশেই তারা সিলেটের রাজনীতিতে দিকনির্দেশনা দিতেন। রাজনীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই কারও অনুপস্থিতিতে রাজনীতি থেমে থাকে না। তবে বর্তমানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী পরিষদে সিলেটের প্রতিনিধিত্বের যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য সিলেটের ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাদের কেন্দ্রে মূল্যায়ন করা উচিত।