শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
একে একে বিদায় সব মেয়র

বিএনপির আছে বাকি দুই

নিজামুল হক বিপুল

বিএনপির আছে বাকি দুই

একে একে সব কটি সিটি করপোরেশন থেকে নির্বাচিত মেয়রদের হারাচ্ছে বিএনপি। সর্বশেষ সোমবার হারিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন মেয়রকে। এ নিয়ে মোট চারটি সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রকে বরখাস্ত করেছে সরকার। এখন বাকি আছেন দুজন। এরা হলেন বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল ও কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। এখন পর্যন্ত কোনো মামলা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে যে কোনো সময় মামলাজনিত কারণে তারাও বরখাস্ত হতে পারেন। জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি    বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই সবকিছু পাল্টে যেতে শুরু করে। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতা, সন্ত্রাস, পেট্রলবোমা মেরে সাধারণ মানুষ হত্যাসহ নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন বিএনপি ও তাদের জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। এসব ঘটনায় মামলা হয়। আসামি করা হয় একাধিক সিটি মেয়রকে। এর পর থেকেই পালিয়ে বেড়ান সিটি মেয়রদের অনেকে। এরই ফল হিসেবে এখন একে একে পদ হারাচ্ছেন বিএনপি সমর্থিত এই মেয়ররা। রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বরখাস্ত হয়েছেন এপ্রিল মাসে। বুলবুলের বিরুদ্ধে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ রায় হত্যাসহ বিস্ফোরক আইনে ১৬টি মামলা রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে বুলবুল পলাতক ছিলেন। সিটি করপোরেশনে অফিস করতেন না। তবে গোপন স্থান থেকে অফিসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতেন। এ অবস্থায় মামলাসহ একাধিক অভিযোগের কারণে রাজশাহীর মেয়র বুলবুলকে বরখাস্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজশাহী নগর পুলিশের পক্ষ থেকে ২৩ জানুয়ারি একটি চিঠি দেওয়া হয় পুলিশ সদর দফতরে। সেই চিঠির আলোকে পুলিশ সদর দফতর থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বরখাস্ত করে বুলবুলকে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বরখাস্ত হন চলতি বছরের শুরুর দিকে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্পূরক চার্জশিটে অভিযুক্ত হওয়ার পর তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। চার্জশিটভুক্ত আসামি হিসেবে গত ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে জামিন না দিয়ে জেল হাজতে পাঠান। এর পরই তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বর্তমানে তিনি কারাগারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নান ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর ১২ ফেব্রুয়ারি আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠান। বিএনপির হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ৪ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় মেয়রকে আসামি করে করা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের প্রায় এক মাস পর ৮ মার্চ প্যানেল মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর পরপরই এম এ মান্নানকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সর্বশেষ সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক আদেশে বরখাস্ত করা হয় খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে। তিনি জানুয়ারিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের সময় থেকে দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। এ কারণে বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হতে পারেননি। অবশ্য সুস্থ হয়ে বর্তমানে তিনি খুলনাতেই অবস্থান এবং সিটি করপোরেশনে অফিস করছিলেন। খুলনায় অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলায় ১১ জুন মনিরুজ্জামানসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক আদেশে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা ১২ অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হয়।

২০১৩ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুলনা, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আরিফুল হক চৌধুরী ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নির্বাচিত হন। আর একই বছরের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন এম এ মান্নান। এদিকে চার সিটি থেকে বিএনপি সমর্থিত নির্বাচিত মেয়ররা বরখাস্ত হলেও এখনো টিকে আছেন বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তারা দুজনই নিজের মেয়র পদ বাঁচিয়ে রাখতে যোগ দিচ্ছেন না কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। কুমিল্লার স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, দলের কর্মসূচিতে একেবারেই থাকছেন না প্রভাবশালী মেয়র সাক্কু। তিনি সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ব্যস্ত। সূত্র জানায়, কুমিল্লা বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দূর হলেও সিটি মেয়র এখন সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন না দলীয় কর্মসূচিতে। তার অনুসারীরাও দলের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন না। অন্যদিকে বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল রাজনীতির ময়দানে একেবারেই নিষ্ক্রিয়। বরিশালের বিএনপির রাজনীতিতে তাকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চলা বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে একবারও দেখা যায়নি। ফলে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বরিশালের মেয়র কামাল সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করে নিজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি চান না তার মেয়র পদ কোনোভাবেই হাতছাড়া হোক। এ কারণে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাভাবিকভাবে। বরিশালের স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, দলীয় কর্মী-সমর্থকরা তার কাছে গেলে তাদেরও এড়িয়ে চলেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর