শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জাগরণ মঞ্চের কফিন মিছিল পুলিশের বাধা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

জাগরণ মঞ্চের কফিন মিছিল পুলিশের বাধা

ফয়সাল আরেফিন দীপনের হত্যাকারী এবং আহমেদুর রশীদ টুটুল, রণদীপম বসু ও তারেক রহিমের হত্যাচেষ্টাকারীদের গ্রেফতার-বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ সব খুনের বিচার দাবিতে গতকাল গণজাগরণ মঞ্চ শাহবাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে কফিন মিছিল বের করলে সচিবালয়ের সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। -রোহেত রাজীব

প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন ও ব্লগার হত্যার প্রতিবাদে গতকাল প্রতীকী কফিন মিছিল করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। মিছিলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এ সময় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। পরে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমরা বলেছি, আজ আমরা কফিনের মিছিল নিয়ে এসেছি। এই কফিনগুলোতে নতুন লাশ ভরে দেবেন, নাকি আগে যারা লাশ হয়েছেন তাদের হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করবেন, তা জানতে এসেছি। উত্তরে যত শিগগির সম্ভব ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক হত্যার ঘটনাগুলোর রহস্য উন্মোচন করা হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের বলেছেন। আমরা সুনির্দিষ্ট সময় জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রী সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গত দেড় বছরে মুক্তমনাদের ওপর চালানো হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।’ ইমরান বলেন, ‘এখন ব্যক্তিনিরাপত্তার চেয়ে রাষ্ট্রনিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমরা শঙ্কায় আছি। শিক্ষক, ব্লগার, লেখক, প্রকাশকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর পর্যন্ত আক্রমণ হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে রাষ্ট্র নিরাপদ এবং জঙ্গিবাদের হাত থেকে তারা রাষ্ট্রকে রক্ষা করবে।’

এর আগে গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে শাহবাগ থেকে প্রতীকী কফিন মিছিল বের করেন গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। মিছিলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ যোগ দেয়। এ সময় তারা ফুল ও জাতীয় পতাকা মোড়ানো ছয়টি কফিন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে যাত্রা করে। মিছিলটি পুলিশি প্রহরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, দোয়েল চত্বর ঘুরে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে সচিবালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে মিছিলটি কদম ফোয়ারা পার করে প্রেসক্লাবের সামনে গেলে পুলিশের দ্বিতীয় দফা বাধার মুখে পড়ে। এরপর তারা সচিবালয়ে ঢুকতে চাইলে পশ্চিম গেটে তিন স্তরের ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা ব্যারিকেডের ওপর কফিন রেখে ও নানা স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। প্রেসক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, জঙ্গিবাদীরা ব্লগার, প্রকাশক, মুক্তমনা ব্যক্তি, পুলিশ ও পীরদের পর্যন্ত হত্যা করছে। তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে। সরকারের মধ্যে একটি মহল এই জঙ্গিদের মদদ দিচ্ছে।

সরকার জঙ্গিদের ব্যাপারে ‘উদার’ উল্লেখ করে ইমরান বলেন, সরকারের মধ্যে জঙ্গিবাদীদের ভূত ঢুকেছে। এই ভূত ছাড়াতে হবে। আর সরকার যদি জঙ্গিদের ব্যাপারে উদাস হয়, তবে এর কড়া মূল্য সরকারকে দিতে হবে। এর পরই সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় তারা একটি স্মারকলিপি জমা দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা বৈঠক করেন গণজাগরণ মঞ্চের সদস্যরা।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে ইমরান এইচ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। খোদ রাষ্ট্রই এখন নিরাপদ নয়। সরকারের নির্লিপ্ততা প্রমাণ করে যে তারা জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ফলে হত্যাকারীরা গ্রেফতার হচ্ছে না। প্রতিনিধিদলে ইমরান এইচ সরকার ছাড়াও ছিলেন ভাস্কর রাশা, সঙ্গীতা ইমাম, জনার্দন দত্ত নান্টু, জি এম জিলানী শুভ, জীবনানন্দ জয়ন্ত, তাহনিমা সুলতানা সাথী। এদিকে প্রকাশক দীপন হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। এতে জাতীয় নারী জোট, জাতীয় শ্রমিক জোটসহ কয়েকটি সংগঠন যোগ দেয়। দীপন হত্যার প্রতিবাদে আজ বেলা ৩টায় শাহবাগে মুক্তচিন্তার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর