শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সমস্যায় হাবুডুবু মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল

মাহবুবুল হক পোলেন, মেহেরপুর

সমস্যায় হাবুডুবু মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল

সমস্যার পর সমস্যা জমে তৈরি হচ্ছে সমস্যার স্তূপ। তারপর সেই স্তূপে তলিয়ে যাচ্ছে খোদ হাসপাতাল। পর্যাপ্ত ডাক্তার  নেই, ওষুধ নেই, রোগী রাখার সিট নেই- ইত্যাদি নানা সমস্যা। আর এসব সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। জেলার রোগীরা এখানে কার্যকর কোনো স্বাস্থ্যসেবাই পাচ্ছেন না।

মেহেরপুর জেলার ৮ লক্ষাধিক মানুষকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ১০০ সিটের মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। তারপর দীর্ঘ ১৭ বছর পার হয়েছে। ২০১৪ সালে বর্তমান সরকার হাসপাতালটিকে ১০০ বেড থেকে ২৫০ বেডে উন্নীত করে। কিন্তু আসল যে সমস্যা তা তিমিরেই রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৮০-২০০ রোগী ভর্তি থাকেন। যেখানে ১০০ জনের জন্য ৪২ জন ডাক্তার প্রয়োজন, সেখানে মাত্র ১৯ জন ডাক্তার রয়েছে। ফলে রোগীরা সময়মতো ডাক্তার ও ওষুধ না পেয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। অপারেশন থিয়েটার ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা থাকলেও ডাক্তার ও নার্সের সংকটে তা চালু করা সম্ভব হয় না। কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও নেই বছরের পর বছর ধরে। এ কারণে দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে এসে বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, জরুরি বিভাগে রোগীর চাপ দেখলেই বহিঃবিভাগের ডাক্তাররা রোগী ফেলে পালিয়ে যান। তখন রোগীরা বাধ্য হন হাসপাতালের আশপাশের ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে। ওয়াকিবহাল অনেকের অভিযোগ, সময়মতো চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসেন না। ফলে রোগীরা অপেক্ষা করে ফিরে যেতে বাধ্য হন। তা ছাড়া বেলা ১টা বাজতে না বাজতেই বন্ধ করে দেওয়া হয় চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। কেউ কেউ জানান, হাসপাতালের অনেক ডাক্তারই বাইরের বিভিন্ন ক্লিনিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। হাসপাতালের বদলে এই চুক্তিবদ্ধরা ওইসব ক্লিনিকেই বেশি সময় দেন। আবার মিটিং করার নামে অনেক সময়ই চিকিৎসকরা সংরক্ষিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে সময় কাটান। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, হাসপাতালের একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটি জ্বালানি তেলের অভাবে চলে না। তবে রোগীর জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া না গেলেও মোটা টাকা দিলে সচল হয়ে যায় এ অ্যাম্বুলেন্স। আর এর ড্রাইভার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টু-পাইস হাতিয়ে চলেছেন। এ জন্য একটি চক্রও গড়ে তোলা হয়েছে। চক্রটি হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে সেঁটে দিয়েছে তাদের মোবাইল নম্বর সংবলিত পোস্টার। ফলে রোগীদের বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হয়। হাসপাতালের রোগীদের জন্য খাবার পানির কোনো টিউবওয়েল বা ওয়াটার পাম্পের ব্যবস্থা না থাকায় এক-দেড় কিলোমিটার দূর থেকে পানি নিয়ে আসতে হয়। হাসপাতালে বিকল্প বিদ্যুৎব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় ইমার্জেন্সি অপারেশনও সারতে হয় মোমের আলোতে। বেডের অভাবে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। চাপ বাড়লে হাসপাতালের বারান্দায় ময়লা-আবর্জনা ও কুকুর বিড়ালের সঙ্গেই সহাবস্থান করতে হয় রোগী ও স্বজনদের। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে সেই রোগীকে ঢাকা কিংবা রাজশাহীতে রেফার্ডের টিকিট ধরিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালে রোগীদের খাদ্য সরবরাহের বেলায়ও অভিযোগের অন্ত নেই। ২৫০ বেডের হাসপাতাল হলেও খাবার বরাদ্দ থাকে ১০০ জনের। ফলে বেশি সংখ্যক রোগীকে খাবার কিনে খেতে হয় বাইরে থেকে। আর যে খাবার পরিবেশন করা হয় তা মুখে তুলতেই পারেন না রোগীরা। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আলোক কুমার দাস হাসপাতালে সময় দেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, তত্ত্বাবধায়ক একটি ক্লিনিকের দায়িত্বে বেশি ব্যস্ত থাকেন। একইভাবে ডা. আলোক কুমার দাসও শহরের একটি ওষুধের দোকানে চিকিৎসা বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকেন। এসব ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মুঠোফোনে কোনো কথা নয়। অফিসে আসুন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে যে তথ্যগুলো দেওয়ার মতো সেগুলো দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর