শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

পঞ্চগড়ে রং ধরেছে কমলায়

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ে রং ধরেছে কমলায়

গাছে গাছে কাঁচা আর আধাপাকা থোকা থোকা কমলা ঝুলে আছে। বেশকিছু গাছ কমলার ভারে হেলে পড়েছে। হেলেপড়া গাছকে বাঁশের ঠেকা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের ভেলকুপড়া গ্রামে করতোয়া নদীর তীরঘেঁষে গড়ে উঠেছে কমলা বাগান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, বিভাগের সবচেয়ে বড় কমলা বাগান এটি। বাগানের মালিক আবুল কাশেম প্রধান জানান, এখনো বাজারে বিক্রি শুরু করেননি তিনি। এবারই তার বাগানে প্রথম ফল এসেছে। তাই প্রথম তোলা ফলগুলো পরিবার আর আত্মীয়স্বজনকে দেবেন। এর পর বিক্রি শুরু করবেন। আবুল কাশেম প্রধান বলেন, কমলা পাকা শুরু হয়নি এখনো। রং ধরা শুরু হয়েছে। তবে এ মাসেই বাজারে উঠতে শুরু করবে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহযোগিতায় ২০১০ সালে শুরু করি কমলা চাষ। গত বছর কিছু গাছে ফল ধরেছিল। এবার প্রায় ৯০০ গাছে কমলা ধরেছে। জানা গেছে, এক যুগ আগেও পঞ্চগড়ে কমলা একটি দুমূর্ল্যরে ফল হিসেবেই ধরা হতো। দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। অধিকাংশ বাড়িতেই একটি দুটি কমলা গাছ আছে।

 তবে শুরুতে গৃহস্থরা শখের বসে একটি দুটি গাছ লাগাতেন। বর্তমানে পঞ্চগড়ের কমলা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। কয়েক বছরে জেলার অন্যতম অর্থকরি ফসলের স্থান করে নিয়েছে কমলা। সদর উপজেলার বামনপাড়া গ্রামের হাবিব প্রধানের বাগানে এবার ৫শ’ গাছে কমলা ধরেছে। একেকটি গাছে ২০০ থেকে এক হাজার পর্যন্ত কমলা ধরেছে। ২০১১ সাল থেকে তিনি কমলা বিক্রি শুরু করেন। গত বছর তিনি লক্ষাধিক টাকার কমলা বিক্রি করেন। এবার কমপক্ষে দুই লাখ টাকার কমলা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। হাবিব প্রধানের সহধর্মিণী শেফালী প্রধান বলেন, দুজনে মিলে বাগান করেছি। সারা দিন বাগানের পরিচর্যায় কেটে যায়। এবার কমলার সাইজ অনেক বড় হয়েছে। তিনি জানান, চলতি মাস থেকে বাজারে কমলা বিক্রি শুরু করবেন। সদর উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের কলেজ শিক্ষক মো. সালাউদ্দিন প্রধান দুই একর জমিতে কমলার বাগান গড়ে তুলেছেন। চার বছর ধরেই তিনি কমলা বিক্রি করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়ে শুধু খাসিয়া জাতের কমলার চাষ হয়। শীত বেশি হওয়ায় পঞ্চগড়ের মাটি ও পরিবেশ কমলা চাষের উপযোগী। অনেকে বলছেন, পঞ্চগড়ের কমলা সিলেটের কমলার চেয়ে ভালো। ২০০৬-১১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের অধীনে ২২৩টি বাগানে ৩৪ হাজার ৮৮৮টি কমলার চারা রোপণ করা হয়। বসতবাড়ির আশপাশে রোপণ করা হয় এক লাখ ৫৬ হাজার চারা। ১৫ হাজার কমলাচাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১১ সালের শেষের দিকে হঠাৎ করে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কমলাচাষিরা বিপদের মুখে পড়েন। ২০১৪-১৫ সালে আবার সিপিপি (সাটরাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প) নামে এ প্রকল্প শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় চলতি মৌসুমে ১৩৫ জন চাষিকে ১০০ করে চারা দেওয়া হয়েছে। সার কীটনাশক ছাড়াও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৯৩৫টি বসতবাড়িতে ১২টি করে চারা দেওয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ২০০ মেট্রিক টন এবং আগামী মৌসুমে ৫০০ মেট্রিক টন কমলার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পঞ্চগড়ে কমলা নতুন ধরনের ফসল। এ জন্য সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং কৃষকদের কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখা দরকার। পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স ম আশরাফ আলী বলেন, কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গড়ে ওঠা বাগানগুলোতে কয়েক বছর ধরেই কমলা ধরছে। প্রতি বছর কমলার উৎপাদন বাড়ছে। পঞ্চগড়ের কমলা অন্যান্য এলাকায় উৎপাদিত কমলা থেকে আকার, রং ও স্বাদে-গন্ধে আলাদা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর