মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখা হলেও তা গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশটিতে যে সরকারই আসুক না কেন তাদের সঙ্গেই সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ঢাকার পররাষ্ট্র দফতর। এ জন্য মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সরকার যদি পুনরায় ক্ষমতায় আসে তাহলে ঢাকার কূটনৈতিক পদক্ষেপ হবে এক ধরনের আবার বিরোধী পক্ষ যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে হবে আরেক ধরনের। তবে সব পদক্ষেপের লক্ষ্যই হবে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের বিদ্যমান সরকারকে আরও জোরদার করা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছেন, প্রতিবেশী দেশের নির্বাচনে যে সরকারই আসুক, তার সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ এবং সুসম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। জানা যায়, মিয়ানমারের জনগণ ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গতকাল সব দলের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা সামরিক শাসনের অবসান হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বতর্মান সেনাসমর্থিত বেসামরিক সরকারের প্রেসিডেন্ট থিয়েন শিয়েন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন এবং ফলাফল যাই হোক না কেন তাকে সম্মান জানানো হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। এ নির্বাচনে সেনাসমর্থিত ক্ষমতাসীন ইউনিয়ন সলিডারিটি ডেভেলপমেন্ট পার্টিও নির্বাচনের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে বিরোধী নেত্রী অং সাং সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে পার্লামেন্টে জয়ী হতে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে বর্তমানে বিসিআইএম উদ্যোগ, জ্বালানি সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, বাণিজ্য বৃদ্ধি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, কৃষি সহযোগিতা, সামরিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক রয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ আন্তর্জাতিক আদালতে মীমাংসা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা, সীমান্ত চোরাচালান ও মানব পাচার ইস্যুতে আছে জটিলতা। জটিলতার ইস্যুগুলোতে মিয়ানমারের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও বাংলাদেশের পেশাদার কূটনীতিকরা মনে করেন, সমস্যা সমাধান এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সবার আগে প্রয়োজন সুসম্পর্ক। এ জন্য মিয়ানমারের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতেই নিজেদের পদক্ষেপ নির্ধারণে আগ্রহী বাংলাদেশ। সদ্য মিয়ানমারে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন শেষে ফেরত আসা এক কূটনীতিক বলেন, যদি ক্ষমতাসীন ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নির্বাচনে জিতে ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে মিয়ানমারের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতির কোনো পরিবর্তন আশা করা যায় না। তবে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি নির্বাচনে জয়লাভ করলে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। যদিও সু চি অনেক বিষয়ে কথা বললে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখনো কোনো কথা বলেননি।