মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিকল্প বাণিজ্য রুট খুঁজছে ভুটান

বাংলাদেশের জলপথ ব্যবহারের অনুরোধ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

স্থলবেষ্টিত ভুটান পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের জলপথ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহার করে নিজ দেশে এবং তৃতীয় দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে আগ্রহী। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেছেন ভুটানের রাষ্ট্রদূত। এ ছাড়া পৃথকভাবে তারা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সমুদ্র যোগাযোগ না থাকায় স্থলবেষ্টিত ভুটান ও নেপালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে দুটি দেশই বিকল্প রুটে বাণিজ্য পরিচালনায় বাংলাদেশে ট্রানজিট সুবিধা চেয়ে আসছে।

জানা গেছে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের জলপথ ব্যবহারে ভুটানের প্রস্তাবটি নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালে ভুটানের সঙ্গে পৃথকভাবে ট্রানজিট চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে একটি সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও পাঠানো হয়েছিল। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, জলপথ ব্যবহারে ভুটানের সঙ্গে এখন আর পৃথক ট্রানজিট চুক্তির প্রয়োজন নেই। গত জুনে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঢাকায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সংশোধন করে তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ রাখা হয়েছে। ওই সুবিধার আওতায় ভুটানকে জল ও স্থলপথে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্য চুক্তির আওতায় নৌ-প্রটোকলের (পিআইডব্লিউটিটি) মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে ভারত। ওই চুক্তির আওতায় ভুটানও জলপথ ব্যবহারের সুযোগ পেতে পারে। চুক্তিতে তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে জলপথে চাঁদপুর, মাওয়া, সিরাজগঞ্জ চিলমারী হয়ে দইখাওয়া পর্যন্ত একটি রুট এবং মংলা বন্দর থেকে বিকল্প বাণিজ্য রুট  কাওখালী, বরিশাল, চাঁদপুর, মাওয়া, সিরাজগঞ্জ, চিলমারী হয়ে দইখাওয়া পর্যন্ত আরেকটি রুট ব্যবহার করতে  চেয়েছিল ভুটান। ওই প্রস্তাবটিই এখন বিবেচনা করা হচ্ছে। সূত্রটি আরও জানায়, ল্যান্ড লক দেশ হওয়ায় ভুটানকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন করতে হয় ভারতের কলকাতার হলদিয়া সমুদ্রবন্দর দিয়ে। তবে ভুটানের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে হলদিয়া সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাণিজ্য কার্যক্রম চালাতে যে খরচ হয় বাংলাদেশের মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি করলে খরচ তার অর্ধেকে নেমে আসবে। এ কারণেই জলপথে ট্রানজিট সুবিধার আওতায় এ দুটি সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে সর্বোচ্চ আগ্রহ দেখাচ্ছে ভুটান।

জলপথ ব্যবহারে ভুটানের প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলপথের অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে বিশ্বব্যাংক বহুপাক্ষিক ঋণ দিতে চাইছে। এ ধরনের ঋণের শর্ত হচ্ছে, কমপক্ষে তিনটি দেশ মিলে ওই ঋণের জন্য আবেদন করতে হয়। এরই মধ্যে আমাদের সঙ্গে ভারত জোট করতে সম্মত হয়েছে। তৃতীয় দেশ হিসেবে এখন ভুটানকে নিতে চাইছি আমরা। এর ফলে ভারত ও ভুটান উভয়েই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহারের সুযোগ পাবে।

সর্বশেষ খবর