বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রয়োজনে ভাইবার হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের ডিজিটাল তথ্য-প্রযুক্তির সুযোগকে অপব্যবহার করে কিছু লোক ক্রাইম করছে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িতদের ধরিয়ে দিন। এদের চিহ্নিত করুন। তাহলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের ধরার জন্য প্রয়োজনে কিছু দিনের জন্য হলেও এসব (ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ) প্রযুক্তি বন্ধ রাখা হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস কিছুতেই সহ্য করা হবে না। গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ আহ্বান জানান। স্বতন্ত্র সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে এক ধরনের জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী দেশে নানা ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা বিভিন্ন নামে বিভিন্ন পরিকল্পনায় একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, এদের পরিচয়টা একটাই। জামায়াত-শিবির ও বিএনপির লোকরাই এদের দোসর। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব কিছুতেই সহ্য করা হবে না। তিনি এ ব্যাপারে দেশবাসীর পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু নিউজ দিলে চলবে না, যারা এ সমস্ত দুষ্কৃতীকারী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী এবং সাইবার ক্রাইমে জড়িত তাদের ধরিয়ে দিতে হবে। সরকারদলীয় সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ মাসের পর মাস দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে জঙ্গিদের গ্রেফতার করে। হয়তো সে অস্ত্র, বিস্ফোরক বা খুনের মামলার আসামি। ৬ মাস বা এক বছর চেষ্টা করে এদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করল, কিন্তু দেখা যায় একমাস বা ১৫ দিনের মধ্যে এরা জামিন পেয়ে বহাল তবিয়তে আবার চলে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। স্বাধীন বলেই কিন্তু তারা এভাবে জামিন দিতে পারছেন। আমি আহ্বান জানাব, জামিন যখন দিচ্ছেন তখন অন্তত এরা যে দোষটা করেছে, এরা যে সমস্ত অপরাধ করেছে, মাত্রাটা সম্পর্কে একটু যদি চিন্তা করেন। যারা উকিল বা অ্যাডভোকেট তারা দেশকে এবং দেশের মানুষের নিরাপত্তার কথাটা যদি চিন্তা করেন। 

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের স্বীকৃতি পেয়েছি : সরকারদলীয় সদস্য মমতাজ বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দুটি বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। যার প্রথমটিই ছিল সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ দমন। আমাদের সরকার সব সময়ই সব ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে। এ ক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি।

বন্ধুর মতো বিপন্ন মানুষের পাশে থাকুন  : রাজধানীর মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সে গতকাল সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০১৫’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমার বিশ্বাস, সীমিত সম্পদের মধ্যেও আপনারা সততা, দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাবেন। যে কোনো দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় বন্ধুর মতো বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্তভাবে দাঁড়াবেন। এটি আপনাদের পরম দায়িত্ব ও কর্তব্য। তিনি আরও বলেন, দেশ গঠন ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আপনাদের আত্মনিয়োগ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০১৩ এবং পরে ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সে সময় প্রায় ৩৫০ জন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং ১৫শ’য়ের অধিক যানবাহন ধ্বংস ও জ্বালিয়েছে। সে সময় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আন্তরিকতা ও সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে জনগণের আস্থায় এসেছেন। আর সেই পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে চাই না। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের মনোমুগ্ধকর অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার তৎপরতার কসরত প্রত্যক্ষ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যদের মধ্যে তিনি ‘রাষ্ট্রীয় পদক’ হস্তান্তর করেন।

সর্বশেষ খবর