বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কুণ্ডুবাড়ির মেলা

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

কুণ্ডুবাড়ির মেলা

মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকার দক্ষিণ গোপালপুর গ্রামে প্রতি বছর কালীপূজা ও দীপাবলি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় মেলার। প্রায় আড়াইশ বছর ধরে চলে আসা দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এই মেলাটি কুণ্ডুবাড়ির মেলা নামে পরিচিত। প্রতি বছর কাঠের আসবাবপত্রের সমারহ ঘটে এই মেলায়। মেলায় লোকের ঢল নামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুণ্ডুবাড়িতে ১৭৮৩ সালের নভেম্বরে দীপাবলি ও কালীপূজা উপলক্ষে দীননাথ কুণ্ডু ও মহেশ কুণ্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুণ্ডুদের বংশের নামানুসারে মেলার নাম হয় কুণ্ডুবাড়ির মেলা। এই সময় দীপাবলির পরের দিন এই অঞ্চলের বিভিন্ন কালী প্রতিমা জড়ো করা হতো। এর মধ্যে যাদের প্রতিমা সুন্দর হতো তাদের পুরস্কার প্রদান করা হতো। তৎকালে চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, জারি গান, পালাগান, নৌকাবাইচের আয়োজন থাকত। কালের বিবর্তনে পালাগান, জারি গান, নৌকাবাইচ বন্ধ হলেও পুতুলনাচ ও নাগর দোলার আয়োজন এখনো আছে। বংশ পরমপরায় প্রতি বছর এই মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলা বসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দোকানীরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে। কাঠের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের জন্য এই মেলা বিখ্যাত। এ মেলায় মাদারীপুর ছাড়াও বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের মাটির, বাঁশের ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন মালামাল ট্রাক যোগে নিয়ে আসে বিক্রির জন্য। এবারের মেলায় শিশুদের খেলনা বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রতিবছরের তুলনায় এ বছর কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে দু-এক দিন পরে মেলা জমে উঠলে বিক্রি বাড়বে। মেলার দোকানী সাধন মণ্ডল জানান, গত ১০ বছর ধরে এই মেলায় আসবাবপত্র বিক্রি করছি। মেলা কমিটির সভাপতি ভজন কুণ্ডু জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষ মাত্র চার একর জমির ওপর এই মেলার আয়োজন করেন। পরে ধীরে ধীরে এই মেলা বিস্তৃত হয়। বিস্তৃতি হয়ে আসপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর এই মেলায় কমপক্ষে ৭-৮ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়। মেলার শুরুতে দর্শনার্থী বেশি দেখা গেলেও বেচাকেনা কম হচ্ছে।

তবে বেচাকেনা সামনে বাড়তে পারে বলে ধারণা করেছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাত দিনব্যাপী কুণ্ডুবাড়ির এ মেলা উদ্বোধন করেন মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এ সময় কুণ্ডুবাড়ি পূজা কমিটির সভাপতি ভজন কুণ্ডুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, জেলা পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন, কালকিনি উপজেলা চেয়ারম্যান তৌফিকুজ্জামান শাহিন প্রমুখ।

 

সর্বশেষ খবর