শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
সফল মানুষ

বাড়ির ছাদে সালেহার সবুজের সংগ্রহশালা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বাড়ির ছাদে সালেহার সবুজের সংগ্রহশালা

বাড়ির ছাদে যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। ফল, ফুল, ঔষধি গাছ কী নেই। আম, কাঁঠাল থেকে শুরু করে লটকন, তুলসী, এস্টার সব গাছ শোভা পেয়েছে ছাদে। রাজশাহী মহানগরীর উপশহর এলাকার ‘শাহীন মঞ্জিল’ নামের এ বাড়িটি যেন খোলা আকাশের নিচে সবুজের সংগ্রহশালা। রাজশাহী নগরীর উপশহর হাউজিং এস্টেটের ১ নম্বর সেক্টরের ৬৪৫ নম্বর বাড়ি। ‘শাহীন মঞ্জিল’ নামের এ চার তলা বাড়ির ছাদজুড়ে বিশাল বাহারি বাগান। আর সে বাগান গড়ে গত বছর জাতীয় পদক পেয়েছেন সালেহা খন্দকার। অনবদ্য এ উদ্যোগ আর সাফল্যের জন্য গত বছরের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট আর ৩০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। ছাদে বাগান সৃজনে জাতীয় পুরস্কারে গর্বিত সালেহা খন্দকার এখন রাজশাহীর গর্ব, প্রজম্নের অনুপ্রেরণা।জাতীয় পদকে ভ‚ষিত হওয়া সালেহা খন্দকার জানান, বাজারে বিষমুক্ত ও টাটকা ফলমূল, শাকসবজির অভাব। এ অভাবের তাড়নায় তাড়িত হয়েই বিষমুক্ত ও টাটকা শাকসবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে ২ হাজার বর্গফুট ছাদে ফলমূল ও শাকসবজির বাগান গড়ে তোলেন তিনি। যেখান থেকে শাকসবজি ও ফলমূলের পারিবারিক চাহিদা মেটানো হয়। এরপর ধীরে ধীরে তিনি দেশি-বিদেশি সব ধরনের গাছের পসরা সাজিয়েছেন তার স্বপ্নের বাগানে। সালেহা খন্দকারের সবুজের সংগ্রহশালায় আছে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, লেবু, জাম্বুরা, কুল, জলপাই, ডালিম, শরিফা, বেল, সফেদা, আমলকী, কমলালেবু, আমড়া, জাম, কদবেল, আঁশ ফল, কামরাঙা, মালটা, লটকন, চালতা, করমচা, অড়বরই, গোলাপজাম, জামরুল গাছ। ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট টবে সাজানো আছে পাথরকুচি, শজিনা, শতমূলী, তেঁতুল, থানকুনি, কালোমেঘ, ঘৃতকুমারী, বাসক, তুলসী ও আমলকীসহ নানা জাতের ঔষুধি গাছ। আর ফুল যেন উঁকি দেয় সবুজের মাঝে। গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, এস্টার, বেলী, বাগানবিলাস, জারবেরা, কাঠগোলাপ, অলকানন্দ, কামিনী, থুজা, ড্রাসিনা, এরিকাপাম, মানিপ্ল্যান্ট, মালফুজিয়া, ল্যান্টানা, পয়েনসেটিয়া, চেরি, হাইব্রিড জবা, মুসান্ডা, রাধাচ‚ড়া, মর্নিং গ্লোরি, কিরীটিনী, মে ফ্লাওয়ার, জেফির লিলি। সংগ্রহশালায় আরও আছে ছাতিম, বইচি, শেওড়া, অশত্থ, বট, পাইকর, লাইকড়, জিলাপির বনসাই।

এ ছাড়া কদম, নিম, পলাশ, কৃষ্ণচ‚ড়া, ইপিল-ইপিল, কাঞ্চন, দেবদারু, বকুল, মহুয়া, জাম, শিমুল রয়েছে একই বাগানে। সেখানে আরও আছে টমেটো, বেগুন, মরিচ, পিয়াজ, রসুন, ধনিয়াপাতা, লাউ, পুঁইশাক, গিমাকলমি, পালংশাক, শিম, চালকুমড়া, করলা, পটোল ও মিষ্টিকুমড়াসহ সব ধরনের সবজি। কিন্নরী, জ্যাট্রফা, সাইকাস, ড্রাগন ফ্রুট, জাবেটিকাবা ক্যাসটাস দেখলে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। সালেহা খন্দকার জানান, তাকে সবুজের এ সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তার প্রয়াত স্বামী জুবাইদ আলী। তিনি কৃষিবিদ ছিলেন। এখন তাকে সহায়তা করেন ছেলে শাহীন সালেহউদ্দিন। তিনিও কৃষি কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, স্বামী জুবাইদ আলী কৃষিবিদ ছিলেন। বগুড়ার শেরপুরে তাদের ছোট খামারবাড়ি আছে। সেখানেও সব ধরনের ফলমূলের গাছ আছে। তিনি বলেন, ‘তিনি (স্বামী) আজ বেঁচে নেই। পুরস্কারটি পাওয়ার পর তাকে বেশি মনে পড়ছে। কারণ তিনি বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।’ রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল আমিন জানান, ছাদে বাগান সৃজন খুবই পরিশ্রমের কাজ। অনেক যত্ন করতে হয়। সালেহা খন্দকার বাগানের নিয়মিত পরিচর‌্যা করেছেন। যত্ন করেছেন। সাফল্য পেয়েছেন। ফলে পরিবেশ অধিদফতর জাতীয়ভাবে পদক দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর