রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সিডরের ভয়াবহতা আজও ভোলেনি উপকূলবাসী

মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু, বরগুনা ও কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

আজ ভয়াবহ সেই ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এ দিনটির কথা দখিনের মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন ‘সিডর’ লণ্ডভণ্ড করে দেয় বিস্তীর্ণ জনপদ। ওই সময় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষি ও মৎস্য সম্পদের। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সড়ক, বিদ্যুৎসহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝড় ও পরবর্তী সময়ে রোগ-বালাইয়ে মারা যায় বহু গবাদিপশু। আশ্রয়হীন বহু মানুষকে দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হয়। সিডরের সেই স্মৃতি মনে করে সাগরপাড়ের মানুষ এখনো আঁতকে ওঠেন। প্রত্যন্ত জনপদ ঘুরে এখনো স্বজনহারা মানুষের বিলাপ শোনা যায়। সিডরের আঘাতে বরগুনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা, খুলনা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল ও ভোলা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী সাইক্লোন সিডরের কারণে তিন হাজার ৪০৬ জন লোক নিহত হন। নিখোঁজ হন এক হাজার তিনজন, গুরুতর আহত হন ৫৫ হাজার। এর মধ্যে শুধু বরগুনা জেলায় সরকারি হিসাবে এক হাজার ৩৪৫ জন নিহত হন। সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ১৫৬ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ৫০ জন। দুই লাখ ১৩ হাজার ৪৬১ পরিবারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার ৭৮৫টি, ফসলের ক্ষতি হয়েছে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৩ একর, গবাদিপশু মারা গেছে ৩০ হাজার ৪৯৯টি, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক হাজার ২৩৫টি, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ৪২০ কিলোমিটার। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্য আরও বেশি। আর সেসব ভয়াবহ স্মৃতি মনে করলে এখনো অজানা আশঙ্কায় শিউরে ওঠেন এলাকাবাসী।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলোকে সহায়তা কার্যক্রমের সঙ্গে মানুষকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই উপকূলীয় এলাকার মানুষ দুর্যোগ প্রতিরোধে আরও সক্ষমতা অর্জন করবে। এদিকে সরকারি ও বেসরকারি পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন এক হাজার ৭৮ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আট জেলে। স্বজনহারাদের কাছে তাদের বিষয়ে জানতে গেলে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন, এ দুঃসহ দিনটির কথা জীবনে তারা ভুলতে পারবেন না। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত চার হাজার ৪৪০টি পরিবারকে পাকা ও আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। স্থানীয় একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। কিন্তু সিডরের আট বছর পার হতে না হতেই নির্মাণকৃত অধিকাংশ ঘরের বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বসবাসের অনুপযোগীও হয়েছে অনেক ঘর। ফলে এসব পরিবার এখন ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে, কৃষক ও দুস্থদের আবাসন ব্যবস্থাসহ পর্যায়ক্রমে বিভিন্নভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বরগুনা প্রেসক্লাব ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের উদ্যোগে সিডর স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন, শোকর‌্যালি, স্মরণসভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর