শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নিরাপত্তার চাদরে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরাপত্তার চাদরে দেশ

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গতকাল রাতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের শীর্ষ দুই মানবতাবিরোধী অপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কারাগার এলাকায় র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারা কারাগার এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থান নেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বলেন, ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে দেশের সার্বিকআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সজাগ রয়েছেন। সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই যে কোনো সময়ই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। লালবাগ জোনের অতিরিক্ত পুলিশ উপ-কমিশনার ফয়েজ আহমেদ বলেন, কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। এ ছাড়া কারাগারের সামনের ও আশপাশের রাস্তায় যাতে যানজট সৃষ্টি না হতে পারে সে জন্য গাড়ি ডাইভারশন করে অন্য রাস্তা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ফাঁসির রায় কার্যকর করার আগে রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। কয়েক ধাপের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘিরে। নজরদারি বাড়াতে সরকারের সবকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগের চেয়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য দিয়ে বলেছে, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগে থেকেই কঠোর করা হয়েছিল। দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সূত্র জানায়, নাশকতা ও হামলার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.), চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরসহ দেশের সবকটি বিমানবন্দরে হলুদ সতর্কতা বা ইয়েলো এলার্ট জারি রয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধ মামলার সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী, সাক্ষী, প্রসিকিউটর রেলওয়ে স্টেশন, সব বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম বন্দর, আদালত ভবন, গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাস স্থাপনা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, বেতার ভবনসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ৬৮টি কারাগার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সব থানা ও পুলিশ ফাঁড়িকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সবগুলো শহরে। বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা থেকে গতকাল সকাল থেকে নতুন করে কিছু পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। যে কোনো সময়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও র‌্যাব ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশের সবগুলো মেট্রোপলিটন এলাকাসহ সব থানার পুলিশ থাকবে স্ট্যান্ডবাই। রাস্তায় রাস্তায় টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। দেশের প্রত্যেক জেলার এসপিদের এ বিষয়ে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ পেয়েছি। কোনোভাবেই যাতে নিজেদের এলাকায় কোনো বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড না ঘটে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ পেয়েছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর