শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মগের মুল্লুক ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি

মগের মুল্লুক ঝালকাঠি

সদর হাসপাতাল

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের বেশির ভাগ চিকিৎসকই হাসপাতালে বসেন না। তারা বসেন নিজেদের বাণিজ্যিক প্রাইভেট চেম্বারে। হাসপাতালে  রাজত্ব করছে দালাল, সিন্ডিকেট আর রোগী বাগিয়ে নেওয়া চক্র। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে স্বার্থান্বেষীরা সরকারি ওষুধপথ্য রোগীদের না দিয়ে বাইরের দোকান ও ক্লিনিকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে হচ্ছেন হয়রানি ও প্রতারণার শিকার। সার্বিক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ‘জনবল সংকট’ ‘যন্ত্রপাতি সংকট’ ইত্যাদির অজুহাত তুলে দায় এড়িয়ে চলছেন।

প্রসঙ্গত, গত ঈদুল আজহার পর ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসকরা  নিয়মিত না আসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশ হলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তখন ১৪ জন চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন সিভিল সার্জন। কিন্তু ফলাফল ওই পর্যন্তই। এ অবস্থায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন চিকিৎসকরা।

তারা এখন সিভিল সার্জন অফিসের নির্দেশনাও মানছেন না। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই তারা চলে যাচ্ছেন প্রাইভেট চেম্বারে। খাতা-কলমে হাজির থাকার কারণে তাদের সরকারি বেতন-ভাতায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু ফল ভোগ করছেন রোগীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য নির্মিত হয় ৫০ শয্যার এই সদর হাসপাতাল। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় একে ২০০৩ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এ উন্নীতর কারণে ওষুধ আর খাবারের বরাদ্দ বেড়ে ১০০ জন রোগীর জন্য হলেও অবকাঠামো রয়ে গেছে ৫০ শয্যারই। ফলে বাড়তি বরাদ্দ খুব সহজেই বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্যাথলজি বিভাগের চিকিসৎক না থাকায় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চালাচ্ছেন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টরা। ২৩ জন চিকিৎকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১২ জন। এর মধ্যে কেউ থাকেন লিখিত ছুটিতে, আবার কেউ থাকেন অলিখিত ছুটিতে। ৬ জন বিশেষজ্ঞ থাকলেও মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, শিশু-কার্ডিওলজি-রেডিওলজি-প্যাথলজিস্ট গাইনি, অর্থ সার্জারি-ইএইটি-কনসালটেন্ট চক্ষু-মেডিসিন ও ডেন্টাল সার্জন বিশেষজ্ঞ নেই। হাসপাতালে পৌরসভা থেকে ২ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী (সুইপার) দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। ফলে সবাইকে দুর্গন্ধে নাক চেপে থাকতে হয়। চিকিৎসকদের ৯টায় হাসপাতালে আসার কথা থাকলেও কেউ আসেন ১০টায়, আবার কেউ আসেন ১১টায়। সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ বাণিজ্যিক ডাক্তারদের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখতে ও প্যাথলজি পরীক্ষা করতে হয়। ঝালকাঠি হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষার যন্ত্রপাতি থাকলেও পার্সেন্টেসের লোভে চিকিৎসকরাই দালালদের মাধ্যমে রোগীদের প্যাথলজি সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। এই হাসপাতালে অবশ্য একটু ব্যতিক্রম পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেডিকেল (ইউনানি ) ডা. মনিরুল ইসলামের কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় দিন-ভর লেগেই থাকে। কারণ যতক্ষণ রোগী আসেন, ততক্ষণ ডাক্তারও থাকেন। প্রতিদিন তিনি শতাধিক রোগী দেখেন। তারপরও কোনো ক্লান্তির ছাপ থাকে না তার চেহারায়। জানা গেছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পোস্টিং থাকলেও ডেপুটেশনে সদর হাসপাতালে রয়েছেন তিনি। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘লোকবলের অভাবে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। সিভিল সার্জন অফিস থেকে লোকবল ও অবকাঠামোর প্রয়োজনের কথা জানিয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় পরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সভাপতি এবং এমপিকেও এসব জানানো হয়েছে। লোকবল ও অবকাঠামোর সমস্যা দূর হলে সংকট কেটে যাবে।’

সর্বশেষ খবর