শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুঃসময়েও জামায়াতের নজর ৪৫ পৌরসভায়

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আসন্ন ২৪৫ পৌরসভা নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর নজর ৪৫ পৌরসভা। নিজেদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও মাঠ ছাড়বে না দলটি। সূত্র জানায়, দলের দায়িত্বশীলরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিমধ্যে দলের দুই নির্বাহী পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল ও মাওলানা আবদুল হালিমকে পৌর নির্বাচন সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবে  বনিবনা হলে ‘ধানের শীষ’ নইলে ‘স্বতন্ত্র’ প্রতীকে নির্বাচন করবে জামায়াত।

সূত্রটি জানায়, তবে ৫ নভেম্বর থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মামলা ও ‘ধরপাকড়ে’  প্রার্থীরা মাঠ গুছাতে পারছেন না। জানা যায়, জামায়াতের নজর রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। এই তিন বিভাগে ৩৫ পৌরসভায় মেয়র পদে জোটের মনোনয়ন চায় জামায়াত। এছাড়াও চট্টগ্রামে ১০, সিলেটে ৪ ও ঢাকায় ১ পৌরসভার দিকে নজর জামায়াতের। গত চার বছর সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে না পারলেও জোটপ্রধান বিএনপির কাছে জামায়াত এসব পৌরসভায় মেয়র পদে জোটের সমর্থন চাইবে। না পেলেও তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। ২০১১ সালের ২৪৭ পৌরসভার ২০টিতে মেয়র পদে জামায়াত প্রার্থীরা জোটের সমর্থন পেয়েছিলেন। এর মধ্যে ৯টিতে  জয় পায়। ওই নির্বাচনে ৫০ পৌরসভায় জোটের সমর্থন চেয়ে বিএনপির সঙ্গে দর কষাকষি করে। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে জোটের মনোনয়ন সুরাহা করা সম্ভব হবে না, তাই তফসিল ঘোষণার পরই নিজেদের দাবির কথা তুলে ধরা হবে বিএনপির কাছে। ২০০৪ সালে জামায়াত যে ৯ পৌরসভায় জয় পেয়েছিল, তার ৮টিই ছিল রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে। উপজেলা নির্বাচনেও এই দুই বিভাগের ২১ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয় পায়। এ পরিস্থিতিতে রংপুর বিভাগের ২০ পৌরসভার ১০টিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এগুলো হলো কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ ও সুন্দরগঞ্জ,  দিনাজপুরের রানীশংকৈল, বীরগঞ্জ, নীলফামারীর  জলঢাকা, পঞ্চগড়, রংপুরের বদরগঞ্জ এবং লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভা।

এর মধ্যে গতবার বীরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ ও সুন্দরগঞ্জে জয় পান জামায়াত সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা। গতবার রাজশাহী বিভাগের চার পৌরসভায় জয় পেলেও এবার জামায়াতের লক্ষ্য বিভাগের ৫০ পৌরসভার ১৪টি। চাঁপাইনবাগঞ্জের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ, বগুড়ার শেরপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম ও শিবগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর,  কাটাখালি ও  চারঘাট, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ ও বেলকুচি এবং পাবনার সাঁথিয়া ও সুজানগর । বগুড়ার যে চার পৌরসভায় নজর জামায়াতের সেগুলোতে গত উপজেলা নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। একই অবস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। গত নির্বাচনে জয় পায় কাটাখালী ও রায়গঞ্জেও। রংপুর ও রাজশাহীর জামায়াতের নজর খুলনা বিভাগের দিকে। এ বিভাগের খুলনার ৩২ পৌরসভার মধ্যে ১১টিতে মেয়র পদে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছে জামায়াত। পৌরসভাগুলো হলো, কুষ্টিয়ার কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর, সাতক্ষীরার কলারোয়া ও সাতক্ষীরা, যশোরের চৌগাছা ও কেশবপুর, খুলনার পাইকগাছা, মেহেরপুর জীবননগর। চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৯ পৌরসভার মধ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, সীতাকুণ্ড এবং বান্দরবান পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। সিলেট বিভাগে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও গোলাপগঞ্জ।

গোলাপগঞ্জ উপজেলায় গত বছর বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী।

 দলটি অভিযোগ করেছে, জামায়াতকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে ধরপাকড় শুরু করেছে সরকার। পুলিশ ও যৌথবাহিনীর চলমান অভিযানে ইতিমধ্যে বান্দরবান, মহেষপুর, নন্দীগ্রাম ও ফুলবাড়িয়ার পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী গ্রেফতার হয়েছেন। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত-শিবিরের আট হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছাত্রশিবিরের সাবেক এক সভাপতি জানান, জয়ের সম্ভাবনা আছে এমন সব পৌরসভাতেই মেয়র পদে জোটের মনোনয়ন চাওয়া হবে। কাউন্সিলর পদে স্থানীয়ভাবে প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করা হবে। ৪৫ পৌরসভায় বিএনপি ছাড় দিতে রাজি না হলে, জামায়াত বিদ্রোহী হবে কি না? এ প্রশ্নে জানান, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য বলেন, জামায়াত নির্বাচনমুখী একটি রাজনৈতিক দল। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে। তাই জোটের সিদ্ধান্ত যাই হোক, আসন্ন পৌরসভাসহ সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করতে চাই। আর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর‌্যায়ে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর