বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মামলা জটে ৩১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব

রুহুল আমিন রাসেল

মামলা জটে ৩১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব

দেশের উচ্চ আদালতে বছরের পর বছর ঝুলছে সরকারের ২৪ হাজার ৫৭২ রাজস্ব মামলা। সমন্বয়ের অভাবে এসব মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান এনবিআর সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, দেশের উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকা রাজস্ব মামলার কারণে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঝুলে থাকা রাজস্ব মামলার অধিকাংশের ব্যাংক গ্যারান্টি ও নথি ব্যবস্থাপনাও ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে এনবিআর চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ মামলা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) আওতায় দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজস্ব মামলার  সঙ্গে জড়িত করদাতা ও প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে এডিআর সফলভাবে কার্যকর হবে এবং উভয়ে লাভবান হবে। এ জন্যে অংশীজনরা যত দ্রুত এগিয়ে আসবেন, ততই সুফল সরকার ও রাজস্ব প্রশাসন পাবে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, আমরা খুবই দুঃখিত যে, বছরের পর বছর ধরে এই মামলাগুলো ঝুলে আছে। এটা ব্যবসার ক্ষতি করছে। ব্যবসায়িক উন্নয়ন ব্যাহত করছে। তবে মামলার জট খুলতে এডিআর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

এদিকে গতকাল পর্যন্ত রাজস্ব মামলার সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন দফতর সংশ্লিষ্ট ২৪ হাজার ৫৭২টি মামলা সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। এসব অনিষ্পন্ন মামলার সঙ্গে সরকারের ৩০ হাজার ৯৪৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি জড়িত। এর মধ্যে শুল্কবিভাগের ১৭ হাজার ৪৭০টি মামলায় ৪ হাজার ৮২৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের ৩ হাজার ২২৬টি মামলায় ১৭ হাজার ৯৩৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ও আয়কর বিভাগের ৩ হাজার ৮৭৬টি মামলায় ৮ হাজার ১৮২ কোটি ৭০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় আটকে আছে। আয়কর বিভাগের মামলাগুলোর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার রেফারেন্স মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও আপিল বিভাগে ভ্যাট সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় আটকে আছে। সব মিলিয়ে ২৪ হাজার ৫৭২টি মামলায় সরকারের সর্বমোট ৩০ হাজার ৯৪৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে। অন্যদিকে দেশের সাতটি কর আদালতে বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার কর মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মো. সেরাজুল ইসলাম। তবে নিয়ম অনুযায়ী এসব মামলা ছয় মাসের মধ্যে কর আদালতে নিষ্পত্তি হয়। এখানে কোনো পক্ষ রায়ে সন্তুষ্ট না হলেই কেবল উচ্চ আদালতে গিয়ে প্রতিকার চান। সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুনে এনবিআর রাজস্ব প্রশাসনের কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে অনিষ্পন্ন রাজস্ব এডিআরের আওতায় নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা জারি করে পত্র প্রেরণ করে। ওইপত্রে বলা হয়, এখনো অনিষ্পন্ন হাজার হাজার মামলা সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টসহ অন্যান্য দফতরে পড়ে আছে। এর সঙ্গে বিপুল পরিমাণে সরকারি রাজস্ব জড়িত। মামলাগুলো যথাসময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় একদিকে সরকার তার ন্যয়সঙ্গত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের এবং সর্বপরি দেশের ব্যবসা পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও এসব মামলার অধিকাংশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক গ্যারান্টি ও নথি ব্যবস্থাপনাও ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। রাজস্ব, ব্যবসা ও ন্যায়নীতির স্বার্থে এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি দরকার। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব মামলার ন্যূনতম ৬০ শতাংশ এডিআরের আওতায় নিষ্পত্তি করতে হবে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে নির্ধারিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এডিআর ব্যাপক অবদান রাখবে বলে আশা করছে এনবিআর।

সর্বশেষ খবর