বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেশজুড়ে নিরাপত্তায় নতুন কৌশল, কয়েক জেলায় নজরদারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশজুড়ে নিরাপত্তায় নতুন কৌশল, কয়েক জেলায় নজরদারি

এখনো কড়া নিরাপত্তা বলয়ে রাজধানীসহ সারা দেশ। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির রায়কে ঘিরে নেওয়া আগাম ও রায় কার্যকর পরবর্তী সময়ে নেওয়া বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো অব্যাহত। আগামী পৌর নির্বাচন পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। কঠোর নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বিশেষ অভিযানও অব্যাহত থাকছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যৌথ বাহিনীর অপারেশনে রাষ্ট্র যতদিন চাইবে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। এর বাইরে সীমান্তে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের যেসব জেলায় বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ওই জেলার প্রতি বিশেষ নজর থাকবে। যৌথ অভিযানে পুলিশই সমন্বয় করছে বলে জানান তিনি। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ফ্রান্সে সন্ত্রাসীদের সিরিজ হামলার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিছু নতুন কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে নিরাপত্তায়। কয়েক ধাপের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ ঘিরে। নজরদারি বাড়াতে সরকারের সবকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগের চেয়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে। আগামী তিন মাস দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিলের কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রমশ বাড়তে পারে। সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি ঢাকায় ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার ও রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা, ঢাকায় তাজিয়া মিছিল প্রস্তুতিস্থলে বোমা হামলায় একজনের মৃত্যু এবং আমিনবাজারে দায়িত্বরত পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম মোল্লাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা এবং আশুলিয়ায় পুলিশকে নৃশংসভাবে হত্যার বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তোলে। এর মধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থা বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়। সেই মতে সারা দেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ফ্রান্সে হামলার পর বাংলাদেশে নিরাপত্তা আরও জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাশকতা ও হামলার আশঙ্কায় ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.), চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরসহ দেশের সবকটি বিমানবন্দরে হলুদ সতর্কতা বা ইয়েলো এলার্ট জারি রয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়ে স্টেশন, সব বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম বন্দর, আদালত ভবন, গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাস স্থাপনা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, বেতার ভবনসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে ৬৮টি কারাগারে। বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা থেকে সম্প্রতি কিছু পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের মতো র‌্যাব সদস্যরা ও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাব সদস্যরা সদা প্রস্তুত। সৃষ্টির পর থেকেই র‌্যাব সাধারণ মানুষের আস্থা এবং ভালোবাসা অর্জন করেই পথ চলছে। এটা অব্যাহত থাকবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলেছে, দেশের প্রত্যেক জেলার এসপিদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। কোনোভাবেই যাতে নিজেদের এলাকায় কোনো বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড না ঘটে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এর বাইরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশনা রয়েছে বিশেষ বার্তায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, যতদিন পর্যন্ত না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, ততদিন পর্যন্ত বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানে পুলিশকে সহায়তা করবে র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড। তবে বিশেষ নজর থাকবে ঝুঁকিপূর্ণ ২৩টি জেলায়। এসব জেলাতেও গত বছর তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। তিনি আরও বলেন, গত ২০১৪ সালের শেষের দিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় হত্যা, অগ্নিসংযোগসহ তাণ্ডবলীলার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর অভিযোগপত্রে নাম আসা আসামিদের গ্রেফতার এবং যারা পুনরায় নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের গ্রেফতারেই মূলত এই বিশেষ অভিযান।

সর্বশেষ খবর