শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মামলা তদন্তে রহস্যময় নীরবতা

রুহুল আমিন রাসেল

মামলা তদন্তে রহস্যময় নীরবতা

চোরাচালানের সময় বাংলাদেশে আটক সোনার হিসাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘিরে রহস্যময় নীরবতা দেখা দিয়েছে। গত ১ বছরেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় এ কমিটি ঘিরে এখন ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। আটক সোনার কী হয়? জনমনের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে আটক সোনার বিষয়ে গত বছর নভেম্বরে তদন্ত চেয়েছে সরকারের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ৯৬৮ কেজি চোরাচালানের সোনা আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা। এ সময়ে ১১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের একটি বড় অংশই বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী।

আটক সোনার হিসাব তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তদন্তে ধীরগতি হলেও আমরা একটা বড় ধরনের কাজ শেষ করেছি। খুব শিগগিরই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেব।’

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, ‘আমরা জনমনে আস্থার সংকট উত্তরণে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছি। যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, সে কমিটির তদন্তের অগ্রগতি জানা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তার মতে, তদন্ত হলে আটক সোনার পরবর্তী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা বাড়বে। একই সঙ্গে জনমনে যদি কোনো অমূলক ধারণা থাকে তা-ও দূর হবে। জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে আটক সোনার চালান নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়। কিন্তু এ নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ বিভিন্ন টকশোয় প্রশ্ন তুলেছেন, এসব সোনা তছরুপ হয় কিনা? এমনকি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক একজন চেয়ারম্যানও প্রশ্ন তুলেছেন আটক সোনার হিসাব নিয়ে। এমন প্রেক্ষাপটে  ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে সর্বশেষ আটক সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে তদন্ত কমিটি করতে এনবিআরের কাছে গত বছর একটি প্রস্তাব দেয় শুল্ক গোয়েন্দা। সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ২০১৪ সালের নভেম্বরে স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত পত্রে বলা হয়, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিপুল পরিমাণ সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। এসব সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউসের গুদাম এবং পরবর্তীতে বিধিমোতাবেক পুলিশ প্রহরায় বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়। তবে আটক এ বিপুল সোনার কী হয়, তা নিয়ে গণমাধ্যম ও জনসাধারণের মধ্যে অস্বচ্ছতাজনিত ধারণা বিরাজ করছে। কেউ কেউ মনে করেন, আটকের পর এসব সোনার আর কোনো হিসাব থাকে না। তছরুপ হওয়ার আশঙ্কাও ব্যক্ত করা হয়। প্রচলিত এ ধারণা সমানে রেখে বিভিন্ন সময় আটক সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা যথাযথভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখার বিষয়ে সামগ্রিকভাবে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে শুল্ক গোয়েন্দা। এ তদন্ত কমিটিতে কাদের রাখা যেতে পারে- এমন প্রস্তাব দিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা বলেছে, সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস, কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট সহকারী রাজস্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ কমিটি ২০১৩ সালের জুলাই থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত যেসব সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা আটক হয়েছে, তা ব্যাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে কিনা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কী প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি হয়েছে, সে বিষয়ে এনবিআরকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এ ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি আটক সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রার প্রতিটি বিভাগীয় মামলাভিত্তিক নম্বর, তারিখ, সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস/কমিশনারেটে জমা হওয়ার নম্বর ও তারিখ, বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার নম্বর ও তারিখ অনুযায়ী সোনা ও মুদ্রার নিষ্পত্তির তথ্য পর্যালোচনা করতে পারে। একই সঙ্গে যে আদেশ মোতাবেক বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, তার তথ্য, অনিষ্পন্ন থাকলে কী কারণে অনিষ্পন্ন রয়েছে সে তথ্যসহ অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এ প্রস্তাব পেয়ে এনবিআর কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সে কমিটি ১ বছর ধরে বিগত ৫ বছর চোরাচালানের মাধ্যমে আটক সোনার হিসাব তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর