শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অগ্নিপরীক্ষায় নির্বাচন কমিশন

গোলাম রাব্বানী

অগ্নিপরীক্ষায় নির্বাচন কমিশন

দলীয়ভাবে প্রথম পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। দলীয় এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিসহ অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমান সুযোগ সৃষ্টি করা ইসির জন্য কঠিন হয়ে যাবে। বিগত নির্দলীয় স্থানীয় নির্বাচনে ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও এবারের নির্বাচনে তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকে সর্বজনীন ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে কঠিন চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ইসি কি শুধু খাতা-কলমে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নাকি বাস্তবেও তাদের নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতা আছে- এবারের দলীয়ভাবে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে সে প্রমাণ দিতে হবে। ইসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, দলীয়ভাবে পৌর নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা কঠিন হবে। কেননা রিটার্নিং অফিসার বেশির ভাগই হচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে তারা চাকরির মায়া ত্যাগ করে ইসির কথামতো কাজ করবেন না। সরকারের নির্দেশনা তাদের মানতেই হবে। তবে ইসির নিজম্ব রিটার্নিং অফিসাররাও দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ায় নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেছেন, এক পৌরসভা নির্বাচন দুই পদ্ধতিতে করাটা নির্বাচন কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও এ নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন সহিংস ও সংঘাতপূর্ণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যারা দলীয় তারা ক্ষমতাবান হন। কিন্তু একই নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় ও অন্য পদে নির্দলীয় নির্বাচন করতে ইসির ব্যবস্থাপনা সংকট হবে।’ তিনি বলেন, একমাত্র স্থানীয় সরকারে মানুষ নির্দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করত। কিন্তু সে বিষয়টা এখন কেমন যেন হয়ে গেল। এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সরকার ও ইসি সময় নিয়ে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনটা দলীয় করতে পারত। না হলে সময় কম থাকায় তা আগের মতোই রাখতে পারত। তিনি বলেন, সব সরকার ইসিকে অসম্মান করেছে। ইসি যদি সময় নিয়ে এটা করত তবে ভালো হতো। তিনি বলেন, ইসি  দলীয়ভাবে নির্বাচন করলে কিন্তু সেভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো হলো না। শক্তিশালী কোনো নির্বাচনী নীতিমালাও নেই। তিনি বলেন, একই নির্বাচনে দুই ধরনের পদ্ধতি জগাখিচুড়ি হয়ে গেল। নির্বাচন কমিশনকে নির্মমভাবে নিয়মনীতি প্রয়োগ করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অতীতের উপজেলা নির্বাচন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু- এ প্রশ্ন রেখে এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, ভোটার তালিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে বিরোধী জোট তথা বিএনপির অনেক নেতা গ্রেফতার হচ্ছেন। প্রার্থীদের অনেকেই এখনো জেলে, যারা পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতেন। তারা কি এখন প্রার্থী হতে পারবেন? এ ছাড়া অনেককেই হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে দলীয় ক্যাডার দিয়ে। আবার তারা প্রার্থী হলে ঠিকমতো প্রচার চালাতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। কিন্তু কমিশন এসব নিয়ে কিছুই বলছে না। অন্যদিকে কীভাবে দলগুলো তৃণমূল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে তার বিষয়ে ইসির কোনো তৎপরতা নেই। বর্তমান কমিশন অতীতে বহুবার অগ্নিপরীক্ষায় পড়েছে কিন্ত সফল হতে পারেনি। তাই অতীতের ভূমিকায় এ নির্বাচনেও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আশাবাদী নন এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ।

বিএনপির শর্ত পূরণে সাড়া দেবে না ইসি : পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি ১৫ দিন ভোট পেছানোর ‘শর্ত’ দিলেও তাতে সাড়া দেবে না নির্বাচন কমিশন। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দলটি এবার পৌর নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছে। দেশের ২৩৬টি পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রেখে গত মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। পরদিন গুলশানে নিজের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর বৃহস্পতিবার তিনি বসেন ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে। গতকাল দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পৌর নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি জানান, পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি, তবে সে জন্য ভোট ১৫ দিন পেছানোসহ কয়েকটি শর্ত রয়েছে। নির্বাচন পেছানোর দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, যে কোনো আবদার করতে তো অসুবিধা নেই। কিন্তু তা রাখা যাবে কিনা দেখার বিষয়। ভোট পেছানোর সুযোগ নেই। ভোটের সময়সূচি ঘোষণার সময়ই ডিসেম্বর থেকে পেছনে না যাওয়ার কারণ তুলে ধরেন সিইসি কাজী রকিব। তিনি জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রকাশ, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত ভোট করা সম্ভব হবে না তাদের।

সর্বশেষ খবর