শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
উন্নয়ন

পূর্বাচলে হবে উপ প্রশাসনিক রাজধানী

সাজানো হবে পুত্রজায়ার আদলে

মোস্তফা কাজল

ঢাকার ভিতর আরেক ঢাকা। রূপগঞ্জের পূর্বাচলকে গড়ে তোলা হচ্ছে মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ার আদলে। রূপগঞ্জের ইউসুফগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর হবে দেশের উপ-প্রশাসনিক রাজধানী। এখানে থাকবে মন্ত্রিপাড়া, সচিবালয়সহ বাংলাদেশের সব প্রশাসনিক সাব-অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়, আধুনিক কলেজ, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মনোরম দৃশ্য সংযোজিত এই উপশহর হবে সর্বাধুনিক সমারোহ। তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রূপগঞ্জে গড়ে উঠবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরিকল্পিত শহর।

১৯৯৩ সালের ২ নভেম্বর প্রস্তাবিত এ উপশহরটি বদলে দিয়েছে রূপগঞ্জের চেহারা। আধুনিক সব অবকাঠামো নান্দনিক শিল্পের সমাহার ঘটিয়ে এ উপশহরকে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ মডেল টাউন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কাজ করছে সরকার। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা পূর্বাচলকে মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ার আদলে নির্মাণ করব। আধুনিকতার স্থাপত্য-কলায় সব ইমারত নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে সেখানে হাজার হাজার শ্রমিক উপশহর প্রকল্পের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। রূপগঞ্জের ১৪টি ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার দুটি মৌজা নিয়ে এ প্রকল্পের অবস্থান। পরিকল্পনা অনুযায়ী জমির পরিমাণ নারায়ণগঞ্জের ৪ হাজার ৫০০ একর, গাজীপুরের ১ হাজার ৫০০ একর। সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে পূর্বাচলকে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ ছাড়া প্রকল্পের জন্য ৩০ হাজার প্লট বরাদ্দের টার্গেট রেখে ২০০১ সালের মাঝামাঝি ১২ হাজার প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আবেদন জমা পড়ে ৩১ হাজার ৩১৪টি। ২০০৩ সালে বাছাই করে সাত হাজার ৮৯০টি প্লট বরাদ্দ করা হয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে। এর মধ্যে দুই হাজার ৯৪৭ জন সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা, এক হাজার ৪১৬ জন স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, এক হাজার ২৯৩ জন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-কর্মকর্তা, এক হাজার ৭৭৪ জন ব্যবসায়ী, ২০৬ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১০১ জন অন্যান্য ব্যক্তি, ৮০ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য (এখনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি), ৬৭ জন সাংবাদিক, ৪৪ জন শিল্পী-সাহিত্যিক, ২৫ জন সাবেক এমপি, ১৭ জন বিচারকের মধ্যে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় তৎকালীন সময়ে। প্রকল্প শুরুর প্রথম দিকে স্থানীয়রা প্রকল্পের বিরোধিতা করলে ১৯৯৭ সালে রাজউক তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে ২৪১ কোটি টাকা ও গাজীপুর জেলাকে ৪২.৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এ বরাদ্দ দিয়ে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ও জায়গা-জমির ক্ষতিপূরণের সিংহভাগই পরিশোধ হয়ে গেছে।  জানা গেছে, বরাদ্দের টাকা পেয়ে উপ-শহরের আশপাশে জমি ক্রয় করে অনেকেই বাড়িঘর নির্মাণ করেন। কেউবা টাকা জমা রাখেন ব্যাংকে ভবিষ্যতে প্লট বরাদ্দ হলে উপশহরে বাড়িঘর নির্মাণের জন্য। এ প্রকল্পে স্থানীয় ১০ হাজার অধিবাসী জমির হিস্যা অনুযায়ী এক থেকে তিন এর অধিক প্লট বরাদ্দ পাবেন। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, উন্নত রাস্তাঘাট, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও উপশহরে থাকবে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের শাখা, অফিস-আদালত, আধুনিক বিপণিবিতান, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, চিত্তবিনোদনের জন্য আধুনিক ব্যবস্থা। বহুতল বিশিষ্ট হাইরাইজ ব্লকের জন্য থাকবে ৩৮৯ একর জমি। স্কুল, কলেজের জন্য থাকবে আলাদা জোন। উপশহরকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জ সাজছে আধুনিক সাজে। এ ছাড়া মেট্রোরেলকে এ উপশহরের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। উপশহরকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জের চারপাশে নির্মাণ হচ্ছে বাইপাস সড়ক। তৈরি হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর তৃতীয় কাঞ্চন সেতু। উপশহর ঘিরে চারপাশে উন্নয়ন ধাবিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ডেভেলপার কোম্পানির আধুনিক হাইরাইজ বিল্ডিং। এ ছাড়া ঢাকার পূর্বাংশে উপশহরকে কেন্দ্র করে একের পর এক নির্মাণ হচ্ছে ছোট ছোট শহর।

সর্বশেষ খবর