রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফরমালিন চেকিং বুথ এখন ভুতুড়ে

আলী আজম

ফরমালিন চেকিং বুথ এখন ভুতুড়ে

নগরবাসীর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে ভেজালের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ জন্য ঢাকার প্রবেশপথসহ বিভিন্ন বাজারে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়। সফলতাও আসে। বেশ কয়েকটি বাজারে ফরমালিন চেকিং বুথও স্থাপন করা হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধের মুখে এ অভিযান বেশি দূর এগোতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল, ভেজালমুক্ত মেশিন নিজেই  ভেজাল। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করাকে এক ধরনের চাঁদাবাজি মনে করেছিলেন তারা। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ অবস্থায় ডিএমপির ভেজালবিরোধী অভিযানের অকালমৃত্যু ঘটে। গত বছরের জুনে নজরদারির পাশাপাশি ফল ও শাক-সবজিতে ফরমালিন পরীক্ষার জন্য নগরীর ২৩৬টি কাঁচাবাজারে বিশেষ বুথ স্থাপন করার কথা বলেছিল ডিএমপি। তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ব্যবসায়ী নেতারাও একাত্মতা প্রকাশ করে সহায়তার কথা বলেছিলেন। ওই সময় বেশ কটি বাজারে বুথ স্থাপন করা হয়। টেবিল-চেয়ারও বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ফরমালিন চেকিং যন্ত্র স্থাপন করা যায়নি। ফলে বুথগুলো আলোর মুখ দেখেনি। অকার্যকর হয়ে পড়ে ফরমালিন চেকিং বুথ। লোকজন না থাকায় একেকটি বুথ এখন ভুতুড়ে কক্ষে পরিণত হয়েছে। শান্তিনগর বাজারে একটি ফরমালিন চেকিং বুথের ভিতরে চেয়ার-টেবিল থাকলেও এখন পর্যন্ত সেখানে কেউ বসেননি। বুথটির ভিতরের আসবাবপত্রে ধুলা জমে আছে। দরজায় ঝুলছে তালা। বুথটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই শান্তিনগর কাঁচাবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফরমালিন চেকিং বুথ স্থাপন করে ডিএমপি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এভাবেই ফরমালিন চেকিং বুথগুলো অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। ভেজাল রোধে সরকার কঠোর হলেও যথার্থ কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় কোথায় কীভাবে ফরমালিন ব্যবহার হচ্ছে তা মনিটরিং করা যাচ্ছে না। ফলে ফরমালিনের দৌরাত্ম্যে রাজধানীর বাজার সয়লাব। ক্রেতারা বলছেন, ফরমালিন প্রতিরোধে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ব্যবসায়ীরা তো ফরমালিন ব্যবহার করতে চাইবেনই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি নজরদারির মাধ্যমে তা বন্ধে উদ্যোগী না হয় তাহলে প্রতিরোধ অসম্ভব। কয়েকজন ক্রেতা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, খাদ্যপণ্য ফরমালিনমুক্ত রাখতে পরীক্ষা করে পণ্য বিক্রি করার কথা থাকলেও তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। ফরমালিন ব্যবহার করায় বাজারের কোনো ফল-মূলে পচন ধরছে না। তবে আমরা প্রতিনিয়ত বিষযুক্ত খাদ্যপণ্য গ্রহণ করছি। ফলে কমছে আয়ু, কমছে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। আসলে বাজারের ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। গত বছরের জুনে ফরমালিনের বিরুদ্ধে ডিএমপির অভিযানে শত শত টন ফল নষ্ট করে দেওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। ফরমালিন মাপার যন্ত্র নিয়ে বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তোলে এবং বিভিন্ন স্থানে ফল ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট পালন করেন। এরপর বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ফলে ডিএমপির ফরমালিনবিরোধী অভিযান এবং ফরমালিন চেকিং বুথ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ফরমালিন চেকিং যন্ত্র নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। আদালত সঠিক যন্ত্র তৈরি অথবা নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছে সরকারের কয়েকটি সংস্থাকে। ওই সংস্থাগুলো সঠিক যন্ত্র নির্ধারণ করার কোনো তথ্য এ পর্যন্ত আমাদের দিতে পারেনি। কাজেই কাঁচাবাজারের চেকিং বুথগুলো সচল করা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর