রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সুরের চাদরে ধ্যানমগ্ন শ্রোতা

মোস্তফা মতিহার

সুরের চাদরে ধ্যানমগ্ন শ্রোতা

হাতে হাতে সুরের পেয়ালা আর ধ্যানে-জ্ঞানে সুরের সাধনা। নানা ধরনের যন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে ধ্যানমগ্ন সুরের সরল সমীকরণ কোনো কিছুরই কমতি ছিল না বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত পাঁচ রাতের উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবের দ্বিতীয় রাতের আসরে। রাগে, তালে, লয়ে, ঠাটে, খেয়ালের শৈল্পিক সৌন্দর্যে এক অনবদ্য রূপ পেয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সংগীতাসরটি। শিল্পীর পরিবেশনার সঙ্গে শিল্পও পেয়েছিল অন্যরকম এক উচ্চতা। শনিবার ছুটির দিন হওয়াতে গতকাল উৎসবের দ্বিতীয় রাতের আসরে সংগীতপ্রিয় সুরের সমজদারদের উপস্থিতিও ছিল মাত্রাতিরিক্ত। সুরের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অধীর ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অনুষ্ঠাস্থলে প্রবেশে সংগীতানুরাগীদের ছিল না বিন্দুমাত্র বিচলতা।

স্কয়ার টয়লেট্রিজের নিবেদনে ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে গত ২৭ নভেম্বর রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের  পাঁচ রাতের এই আসর। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কুণ্ডুর ধ্রুপদ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় রাতের আসর। ধ্রুপদী ছন্দময় সুরের জাদুতে এ সময় উৎসবস্থলে আগতদের সুরের তালে, লয়ে, ছন্দে বিমোহিত করে রাখেন ধ্রুপদের এই শিল্পী। এরপর সরস্বতী বীণায় সুরের ইন্দ্রজালে সুরপ্রেমীদের মোহাবিষ্ট করেন জয়ন্তী কুমারেশ। সরস্বতী বীণার অনন্য পরিবেশনায় আর্মি স্টেডিয়ামে আগত সব সুরের কাঙ্গালদের হৃদয়ে কাঁপন তোলেন এই শিল্পী। মঞ্চ থেকে শিল্পী যেন সুরের আলো ছড়াচ্ছেন না রীতিমতো সুরের ধারা প্রবাহিত করে চলছেন শাস্ত্রীয় সংগীতানুরাগীদের। সুরের সাধক মঞ্চ থেকে বিলিয়ে যাচ্ছেন সুর আর সেই সুর হৃদয়ের পেয়ালায় ধারণ করতে শিল্পানুরাগীদের পিনপতন নীরবতা। সুরের মাধ্যমে যে সাধনার পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় তার, নিজেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও ইহধামের বাইরে রাখা যায় এমনটি লক্ষণীয় ছিল শিল্পীদের পরিবেশনার সঙ্গে সুরের পাগলদের বিমোহিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। যেন সুরের হাটবাজারে সুর সওদায় এসেছেন সুরের কাঙ্গালরা।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ এই আয়োজনে সুরের ইন্দ্রজালে শিল্পী বিমোহিত করবেন শিল্পানুরাগীদের, সুরের সুধা ছড়িয়ে দিয়ে মায়াজাল সৃষ্টি করবেন- এমনটাই স্বাভাবিক।

দ্বিতীয় রাতের আসরে আর্মি স্টেডিয়ামের মাঠ, গ্যালারি ও আশপাশের ৩০ হাজার শ্রোতাদের খেয়াল, কর্নাটকি, ধ্রুপদী, বলার নৈপুণ্য ও এস্রাজে মুগ্ধ করেন শিল্পীরা। দ্বিতীয় রাতের আসরে আরও সঙ্গীত পরিবেশন করেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিল্পী সুস্মিতা দেবনাথ (খেয়াল), কর্ণাটর্কী ও হিন্দুস্তানী সংগীতের স্বনামধন্য তবলা বাদক পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর (ধ্রুপদ), স্বনামধ্য তবলাবাদক পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকর (একক তবলা), কর্ণাটকি শাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যতম সেরা শিল্পী ড. বালমুরালী কৃষ্ণ (কর্ণাটকী সংগীত) এবং পন্ডিত রবি শংকরের শিষ্য ভারতের স্বনামধন্য বংশীবাদক পণ্ডিত রণু মজুমদার, ভারতের উদীয়মান এসপাতিয়ালা-কাসুর ঘরানা ছাড়াও তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যান্য প্রধান ঘরানাগুলোর নান্দনিক পরিবেশনায় মোহাবিষ্ট করেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সমজদারদের। সন্ধ্যা থেকে ভোর অবধি চলে সুরের সাথে শিল্পী ও শিল্পানুরাগীদের বসবাস। ২ ডিসেম্বর ভোরে শেষ হবে পাঁচরাতের এই উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর।

সর্বশেষ খবর