শিরোনাম
রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দখলে বিলীন হচ্ছে মেঘনা

মো. আল-আমিন, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)

দখলে বিলীন হচ্ছে মেঘনা

সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদী ও মেঘনা ঘাট এলাকায় দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ইতিমধ্যে মেঘনার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নিয়েছে তারা। মেঘনা সেতু থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে প্রায় আড়াই বিঘা নদীর খাস জায়গা দখল করে উঠেছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া মেঘনা সেতু-সংলগ্ন নদীর দুই পারে গড়ে উঠেছে স্থাপনা ও ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সেতুটির দুই পাশের নিচের জায়গাগুলোও অবৈধ দখল করে নির্বিঘ্নে চালানো হচ্ছে বালু ও পাথরের ব্যবসা। মেঘনা নদীর ইসলামপুর এলাকায় বালুর ব্যবসা করছেন জসিম ও সোহেল মিয়া। এ ছাড়া তেঁতুলতলা এলাকায় অনিক এন্টারপ্রাইজের মালিক আজিজুল হক, ইসলাম এন্টারপ্রাইজের মালিক হারুন মোল্লা ও আমিনুল ইসলাম এবং রিজভা এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বালু এবং পাথরের ব্যবসা করছে। সেতুর দুই পারের নিচের খালি জায়গায় স্থানীয় দখলদাররা শুরু থেকেই অবৈধ দখল করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এদিকে খাস জায়গা ও নদীতীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সরকারি উদ্যোগ অব্যাহত থাকলেও তা কাজে আসছে না। কারণ এসব অভিযান হচ্ছে লোক-দেখানো ও হাস্যকর। সকালে বন্ধ হলে বিকালে আবার শুরু হয়। মেঘনা নদীর সেতু এলাকা অবৈধ দখলমুক্ত হলেও মুক্ত হয়নি সেতুর দুই পার। মেঘনা সেতুর নিচে অবৈধ দখল করে মেশিন বসিয়ে চলছে বালু ওঠানো-নামানোর কাজ। পাশাপাশি সেতুর দুই পাশে নদী ভরাট করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। জানা গেছে, ব্যবসা বহুমুখীকরণের দিকে যাচ্ছে জাহাজ নির্মাণশিল্পে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান আনন্দ গ্রুপ। তাদের কনটেইনার পোর্ট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে সরকার। মেঘনা নদীর তীরে ৮৫ একর জায়গা জুড়ে এটি নির্মিত হবে। ২০১৬ সালে এ পোর্ট শুরু করবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এদিকে মেঘনাঘাট এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার সরকারি জমি দখল করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকার সরকারি জমি দখল করে নিলেও কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তার বিরুদ্ধে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওই নেতা মেঘনা ঘাট এলাকায় চর রমজান সোনাউল্লাহ্ মৌজার ৩৪২ শতাংশ সরকারি জমি এবং মেঘনা নদীর তীরবর্তী অনেকাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে ইসলাম শিপ বিল্ডার্স নামে নির্মাণ করেছেন একটি প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি মেঘনা নদীর আরও ৩৩০ শতাংশ এলাকা বালু ভরাটের মাধ্যমে অবৈধভাবে দখল করে পাথর ও বালুর ব্যবসার সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন তিনি। পরে তার দখলকৃত ওই জমি ছোট ছোট লঞ্চ ও কার্গো বানানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছেন। দখলের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই বড় বড় প্রতিষ্ঠানও। নদী, ঘরবাড়ি কিংবা খাসজমি সবই সমান তালে দখল করে নিচ্ছে বিভিন্ন প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের আনন্দবাজার-সংলগ্ন মেঘনা নদীর প্রায় ৩০ একর জমি দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। নদীগর্ভের প্রায় ৭০০ ফুট চলে গেছে তাদের পেটে। দখলের কারণে নদীর গতিপথ অনেকটা বদলে গেছে। এর প্রভাবে নদীর অপর পারে বড় ধরনের ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাছের ভূঞা জানান, মেঘনা ঘাটে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সোনারগাঁ থানায়। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এর পরও কেউ যদি প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে, তাহলে অভিযান চালানো হবে। অবৈধ দখল ও ব্যবসার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথের (সওজ) প্রধান প্রকৌশলী এ কে সামসুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিঞা বলেন, মেঘনা নদীর চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বালু উত্তোলন হয় না। আগে মেঘনা সেতুর তীরে নিচে বালুর ব্যবসা চললেও এখন আর তা নেই। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে সাতটি ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর