শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

পাখিদের অভয়ারণ্য

দিনাজপুর প্রতিনিধি

পাখিদের অভয়ারণ্য

ছোট্ট একটি গ্রাম। এ গ্রামের মানুষরাও পাখিপ্রেমিক। এখানে কেউ কোনো পাখি শিকার করে না এবং কাউকে শিকার করতে দেয় না। এ রকম গ্রামবাংলায় কেউ এসে বেরিয়ে গেলে কখনো ভুলতে পারবে না। তবে এ দৃশ্য একবার দেখে গেলে সে আবার আসবে এ গ্রামে। তবে এ গ্রামের মাঝে কদমতলী পাড়ায় যেন হাজার হাজার পাখির অভয়ারণ্য। এখানে পাখিরা মনে করে এটা তাদের নিরাপদ এলাকা। বর্ষা মৌসুমে এখানে প্রায় ২৫/৩০ হাজার বর্ষালী পাখির আস্তানা গড়ে উঠে। পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে, আবার পাখির কলকাকলিতে গোধূলি নামে এলাকায়। এলাকাটি এখন পাখির গ্রাম নামে পরিচিত। এ গ্রামে পাখি রক্ষায় গঠন করা হয়েছে ধনগাঁও সমবায় সমিতি। সমিতির সব সদস্য পাহারা দেয় পাখি এবং পাখির ছানা। এখানকার পাখির বিচিত্র নিয়ম। বাংলাদেশে সাধারণত পাখিরা আসে শীতকালে, যায় বর্ষার আগে। কিন্তু ব্যতিক্রম এখানে। এখানে গত ৫ বছর ধরে বর্ষাকাল শুরুর মুহূর্ত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি এসে বাসা বাঁধে। শীতের শুরুতেই তারা আবার অজানা উদ্দেশে পাড়ি জমায়। এখন পর্যন্ত এ নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। স্থানীয়রা জানান, বর্ষাকাল শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জাতের পাখি এসে বাসা বাঁধে এ গ্রামে। এর মধ্যে বক, ঘুঘু, আমপারু, বাদুর এবং বগ জাতীয় পাখি সবচেয়ে বেশি। শীতকালে পাখিগুলো চলে যাওয়ার পর এলাকায় নেমে আসে সুনশান নীরবতা। এ সময়টায় আমাদের খারাপ লাগে। প্রতীক্ষায় থাকি তাদের ফিরে আসার।  কয়েক বছর ধরে পাখি দেখতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে অনেক পাখিপ্রেমী মানুষ। তবে এখন কেউ আর পাখি শিকার করে না। পাখির বসবাসের একটি বাগানের মালিক জগদীশ চন্দ্র রায় জানান, ভোরে যখন পাখিগুলো খাদ্য আহরণের জন্য দূর-দিগন্তের দিকে ছুটে যায় তখন তাদের কলকাকলিতে আশপাশের গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে। তাদের দল বেঁধে ছুটে চলার দৃশ্য ভোরের আকাশকে মুগ্ধ করে রাখে। ঠিক তেমনি গোধূলিতে তাদের ফিরে আসার দৃশ্য আমাদের মনের মাঝে আরেকটি সকালের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলে। এখন আমাদের এই অতিথিদের বিদায়ের জন্য প্রস্তুতি চলছে। তবে আবারও তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হবে আমাদের এ গ্রাম। আমরা সে আশাই বুক বেঁধে রাখি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর