শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে নোয়াখালী হাসপাতাল

আকবর হোসেন সোহাগ, নোয়াখালী

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে নোয়াখালী হাসপাতাল

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালের সর্বত্রই শুধু নেই আর নেই। নানা সমস্যা আর দুর্গন্ধ ময়লা-আবর্জনা ও অব্যবস্থাপনা জর্জরিত হাসপাতালটি দেখার কেউ নেই। আবার নিম্নমানের খাবার সরবরাহের নামে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের স্বাস্থসেবা কেন্দ্র এ হাসপাতালের সেবারমান নিয়ে ৯৩ শতাংশ রোগীই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, হাসপাতালের প্রবেশ পথে দালালদের ছড়াছড়ি। সচেতন মহল মনে করেন, হাসপাতাল নিজেই রোগাক্রান্ত ও মুমূর্ষু। রোগীদের অভিযোগ, প্রতিটি প্যাথলজি সেন্টারে পিয়ন থেকে ডাক্তার ও কর্মকর্তারা কমিশনবাণিজ্য নিয়ে থাকেন ব্যস্ত। সকাল ও রাতে দুবার ওয়ার্ডে রোগীদের খোঁজখবর নেওয়ার কথা থাকলেও সকালে ওয়ার্ডে যান ডাক্তাররা। নিজেদের প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তারা। সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্যাথলজিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আউট ডোরে রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার কথা থাকলেও ১২টার পর প্যাথলজিতে পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। আউটডোরে যথাসময়ে ডাক্তার আসেন না এবং আসলেও কিছুক্ষণ রোগী দেখে চলে যান। হাসপাতালে এক-দুটি ওষুধ ব্যতীত রোগীদের সব ওষুধ কিনতে হয় বাহির থেকে। শুধু নেই আর নেই বলেন নার্স ও ওয়ার্ড ইনচার্জরা। গাইনি ও শিশুসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডেও চলছে ব্যাপক অনিয়ম। হাসপাতালে নেই কোনো পানির ব্যবস্থা এবং অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট হয়ে দীর্ঘদিন পড়ে আছে। কোম্পানীগঞ্জ থেকে ধার করা অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চললেও তাও বেশির ভাগ সময় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। এ জন্য রোগীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। হাসপাতালে কর্মরত আনসারদের অভিযোগ, ১১ মাস থেকে বেতন ভাতা না পেয়ে আটজন আনসার সদস্য পরিবার-পরিজন নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছেন। এক মাস আগে বেশ কয়েক হাজার টাকা খরচ করে বকেয়া বেতন ৯ লাখ টাকার মধ্যে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় ডিজি অফিস। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, নিম্নমানের সস্তা ও কম খাবার সরবরাহ করে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে রোগীদের অভিযোগ। সকালের পাউরুটি বাসি ও পোকা থাকায় রোগীরা না খেয়ে ফেলে দেয়। তবে খাবারের গুণগত মান তদারকি করতে কর্তৃপক্ষ আরপি ডা. ফজলে এলাহী খান ও আরএমও ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীসহ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির সদস্যরা জানান, কমিটির সদস্যরা মালামালের গুণাগুণ মানসম্মত হলে রান্না করতে অনুমোদন করেন। মানসম্মত না হলে পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে ঠিকাদার ক্ষিপ্ত হয়ে কমিটির সদস্যকে লাঞ্ছিত করার পর থেকে রান্নাঘরে কোনো সদস্যই যেতে রাজি হয়নি। এরপর থেকে ঠিকাদার সস্তা দামে ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করছে। হাসপাতালে ২৫০ জন রোগীর খাবার বরাদ্দ থাকলেও প্রতিদিন ভর্তি থাকে ৪০০-৫০০ রোগী। এতে অপর দরিদ্র রোগীদের নিজ খরচে খেতে হয়, আবার কেউ অধিকাংশ সময় না খেয়ে থাকেন। জেলার প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে ৯৩ শতাংশ রোগীই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এদিকে কমিটির সদস্য ডা. ফজলে এলাহী বলেন, খাবার সরবরাহ নিয়ে অনিয়ম থাকায় এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর হস্তক্ষেপে ঠিকাদার পরিবর্তন করা হয়েছে। ডাক্তাররা আউট ডোরে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। হাসপাতালের আরএমও ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পুরাতন ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় বাথরুমসহ রুমগুলো দুর্গন্ধযুক্ত। এ ছাড়া দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। গণপূর্ত বিভাগকে বার বার অভিযোগ জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা বা নতুন ভবন নির্মাণেরও ব্যবস্থা নেননি। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পুত্রবধূ হত্যা মামলার আসামি হয়েও দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তত্ত্বাবধায়ক এ বি এম আহসান উল্যাহ বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ৩১ ডিসেম্বর আমার চাকরির মেয়াদ শেষ। এ ব্যাপারে কিছু করার নেই। পুত্রবধূ হত্যা মামলার বিষয়ে তিনি এটাকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে জানান।

সর্বশেষ খবর