বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পরিবেশ সংরক্ষণে বড় বাধা ওভেন পিপি ব্যাগ

উৎপাদনে চলছে অরাজকতা —মির্জা আজম

বিশেষ প্রতিনিধি

রাজধানীসহ সারা দেশে শতভাগ পরিবেশ সংরক্ষণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওভেন পলি প্রপাইল (পিপি) ব্যাগ। টিস্যু ও পলিথিনের মিশ্রণে তৈরি এসব ব্যাগ সর্বগ্রাসী পলিথিনের মতোই বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। দেশের সর্বত্র মার্কেট, সুপার মার্কেটে সব ধরনের কেনাকাটার সঙ্গে এসব পিপি ব্যাগ ক্রেতাদের গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাজার চাহিদার কারণে পরিবেশ দূষণকারী এসব পিপি ব্যাগ উৎপাদনে শতাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল এনে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রভাবিত করে এসব পিপি ব্যাগ উৎপাদনকারীরা দেশে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছেন।

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, আমরা যখন ছয় পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পরিবেশ রক্ষার পদক্ষেপ নিয়েছি তখন ওভেন পিপি ব্যাগ পরিবেশ সংরক্ষণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় ওভেন পিপি ব্যাগ পরিবেশবান্ধব নয় বলে রিপোর্ট দেওয়ার পর এ ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার। পাটের ব্যাগের দাম কিছুটা বেশি, এ অজুহাতে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের এসব পলিব্যাগ ধরিয়ে দিচ্ছেন। মূলত এ পিপি ব্যাগ পলিথিন ব্যাগের মতোই পরিবেশবিধ্বংসী।

উল্লেখ্য, দেড় মাস ধরে সরকার ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি— এ ছয় পণ্য পরিবহনে পাটের ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এ আইন বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে ওভেন পিপি ব্যাগ। এ জন্য পিপি ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ বোর্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, পরিবেশ অধিদফতর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও বিএসটিআইর প্রতিনিধি নিয়ে নয় সদস্যের এ কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি পিপি ব্যাগের চাহিদা নির্ধারণ, উৎপাদন, কাঁচামাল আমদানি, অভ্যন্তরীণ ব্যবহার, আমদানির ক্ষেত্রে ডিউটি, ট্যাক্স ইত্যাদি পর্যালোচনা করে এ ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ দেবে। এ প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, পিপি ব্যাগ উৎপাদনকারীরা শতভাগ রপ্তানির জন্য প্রায় ডিউটি ফ্রি কাঁচামাল আমদানি করেন। প্রথমে যাদের লাইসেন্স দিয়েছিল তাদের একটি ফ্যাক্টরিরই কাঁচামালের চাহিদা ছিল ৬ হাজার টন। এতে বোঝা যায় কী পরিমাণ পিপি ব্যাগ বানায় তারা। প্রতি মাসে তাদের বিনিয়োগ বোর্ডে রিপোর্ট দেওয়ার কথা। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানই রিপোর্ট দেয় না। শতাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেদিন আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে ৩৪টির রিপোর্ট এনেছে বিনিয়োগ বোর্ড। তাদের মধ্যে ১০টি লাইসেন্স পাওয়ার পর মাত্র একবার কাঁচামাল আনার রিপোর্ট দিয়েছিল। ২৪টি কাঁচামাল আমদানির কোনো রিপোর্টই জমা দেয়নি। তিনি বলেন, পাটের ব্যাগের প্রচলন করতে গিয়ে আমরা পিপি ব্যাগ উৎপাদকদের বাধার মুখে পড়েছি। তারা নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

সর্বশেষ খবর