বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
লন্ডনে শাহিনা হত্যা

ভাবীর যাবজ্জীবন পাঁচ ভাইবোনের দণ্ড

প্রতিদিন ডেস্ক

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোরী শাহিনা উদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তার ভাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচ ভাইবোনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের আদালত।

গত বছর অক্টোবরে লন্ডনের ওয়াটফোর্ডে ১৯ বছরের শাহিনাকে ‘নির্দয়ভাবে পেটানোর পর তার নিজের বমি গলায় ঢুকিয়ে শ্বাসরোধ করে’ হত্যা করা হয়। শাহিনার প্রতি বর্বর ও লোমহর্ষক আচরণের অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে সোমবার সেন্ট আলবান্স ক্রাউন কোর্ট এ রায় ঘোষণা করেন। বিবিসির বরাত দিয়ে বিডিনিউজ এ খবর দিয়েছে। শাহিনাকে হত্যার দায়ে তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী সালমা বেগমকে (৩২) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাকে কমপক্ষে ১৮ বছর কারাভোগ করতে হবে। সরাসরি হত্যার অভিযোগ থেকে রেহাই পেলেও ‘অসহায় কিশোরীকে নির্যাতন করে হত্যায় সহায়তা’ এবং বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার দায়ে শাহিনার চার ভাই ও এক বোনকেও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৫ বছর বয়সী বড় ভাই সুহাইল উদ্দিনকে ১০ বছর, ৩৩ বছরের ঝুহাল উদ্দিনকে ৯ বছর, ২৭ বছরের জুয়েল উদ্দিনকে ৮ বছর ও ২৪ বছর বয়সী তোহেল উদ্দিনকে সাড়ে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর শাহিনার ২২ বছর বয়সী বোন রাহিনা উদ্দিনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ছয় আসামির সবার বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে বিচার প্রক্রিয়াকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আদালতে শুনানিতে বলা হয়— পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য শাহিনা ১৫ বছর বয়স থেকে সুহাইল ও তার স্ত্রীর অভিভাবকত্বে ছিল। ওই পরিবারের সবাই লন্ডনের অদূরে হার্টফোর্ডশায়ারের ওয়াটফোর্ডের লিভেসডেন রোডের একটি বাসায় থাকতেন। শাহিনা ধীরে খায় বলে তাকে জোর করে খাবার গেলানো হতো ও চড়-থাপড়ের সঙ্গে পেটানোও হতো। খাবার পানি পান ও শৌচাগারে যেতেও তাকে বাধা দেওয়া হতো। শুধু তাই নয়, তাকে কমোডের সিট চাটতে এবং টয়লেটের পানি, নিজের বমি ও মলমূত্র গিলতে বাধ্য করা হতো। শুনানিতে ভাবীর কাছে শাহিনার লেখা চিঠির বিষয়ও উঠে আসে, যেগুলোতে পরিবারে সবচেয়ে ছোট এই কিশোরীর প্রতি সালমার ‘নির্যাতন ও প্রভুত্বের’ লোমহর্ষক চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলেও ঠিক কী কারণে শাহিনাকে নির্যাতন করা হতো, তা পরিবারের কোনো সদস্য জানাননি। তবে হার্টফোর্ডশায়ার কাউন্টি কাউন্সিলের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী বছর শাহিনা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর্যালোচনা হবে। তখন ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধান করা হবে। বিবৃতিতে বলা হয়— ‘এটা একটা চূড়ান্ত মর্মান্তিক ঘটনা। এই কঠিন সময়ে আমরা শাহিনার পরিবার ও তার বন্ধুদের প্রতি সমব্যথী।’ এই কাউন্টির শিশুসেবা বিভাগ ২০১০ সাল পর্যন্ত ১০ বছর শাহিনার পরিবারের সঙ্গে কাজ করেছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এরপর শাহিনার লালন-পালনের দায়িত্ব দিয়ে ভাই-ভাবীকে বিশেষ অভিভাকত্ব দেন আদালত।’

সর্বশেষ খবর