বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা মেলে ‘নামেমাত্র’

সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা মেলে ‘নামেমাত্র’

প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডে সমস্যার কারণে দুই মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চর মারিয়া গ্রামের আবদুল খালেক (৭০)। হাসপাতালেই তার সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে প্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ মিলছে না। খালেক গত ১৮ ডিসেম্বর জানান, এ পর্যন্ত ১৩টি পরীক্ষার বেশিরভাগই বাইরে থেকে করাতে হয়েছে। আর ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।  পরীক্ষা আর ওষুধ মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা।

পেটের ভিতরে নাড়িতে প্যাঁচ লাগার কারণে এ হাসপাতালে ২২ দিন আগে ভর্তি হয়েছেন তাড়াইল উপজেলার বোরগাঁও গ্রামের তারেক (১৪) নামে এক তরুণ। তারও অস্ত্রোপচার হয়েছে। ওই সময় হাসপাতাল থেকে স্যালাইন পেলেও পরবর্তীতে স্যালাইনসহ সব ওষুধ তাকে বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। একইভাবে অন্য রোগীরা জানান, ‘ডাক্তার আসেন, চিকিৎসা দেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না। চিকিৎসা মিলছে নামে মাত্র।’ ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রায় সব রোগীরই এমন অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট, সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট, অর্থোপেডিক বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও চক্ষু বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্টের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। হাসাপাতালের দুটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় প্রায়ই তা বিকল থাকে। তাই রোগী পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে সমস্যার মাঝেও হাসপাতালে নতুন সংযোজন করা হয়েছে হূদরোগ ওয়ার্ড ও নবজাতক ওয়ার্ড। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চার বেডের একটি কেবিনও রয়েছে। অস্ত্রোপচারে সফলতা রয়েছে এ হাসপাতালের। এ বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাইনি অস্ত্রোপচার হয়েছে ১ হাজার ৭৭৬টি। অন্যান্য অস্ত্রোপচার হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৩টি। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার মো. সুলতান উদ্দিন নানা অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে রোগী হয় ৪৫০ থেকে ৫০০ জন। অথচ ওষুধ ও খাদ্য বরাদ্দ থাকে ২৫০ জনের। বরাদ্দের বাইরে বাড়তি রোগীর জন্য ওষুধ ও খাদ্য জোগান দেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। এরপরও চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকে না। ভর্তির বাইরেও আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে রোগী হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ জন। এই বাড়তি রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ সিভিল সার্জন ডাক্তার মোখলেছুর রহমান খানও জানান, এ হাসপাতালে সমস্যার মধ্যে বাড়তি রোগীর চাপ সামলানোটাই বড় সমস্যা। তিনি বলেন, ‘বাড়তি বেড না থাকায় ফ্লোরে-বারান্দায় রোগীরা গাদাগাদি করে থাকে। এক বেডে দুজন রোগীও রাখা হয়।’ অন্যদিকে রোগীদের অভিযোগ, আউটডোরে প্রায়ই সময়মতো চিকিৎসকদের দেখা মেলে না। চিকিৎসাসেবা ঠিকভাবে মেলেনা। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন জানান, কর্তব্যে অবহেলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকজন চিকিৎসককে সতর্ক করা হয়েছে। বর্তমানে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। ওয়াকিবহাল সূত্র মতে, কিশোরগঞ্জে চিকিৎসাসেবায় নতুন আরেকটি সংযোজন হচ্ছে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিজেল কলেজ ও হাসপাতাল। এটির একাডেমিক ভবন ও হোস্টেলের নির্মাণ কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। আর ৫০০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজ ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। নতুন এই ৫০০ শয্যা হাসপাতালের কাজ শুরু হলে জেলা হাসপাতালের রোগীর চাপ কমবে। তখন কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা কিছুটা ভালো হলেও হতে পারে।

সর্বশেষ খবর