রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নৌকার মাথাব্যথা যখন জগ

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

নৌকার মাথাব্যথা যখন জগ

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পৌরসভার নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। আর এখানে সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর মাধাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর জগ মার্কার শওকত আকবর। আর এতে অনেকটা সুবিধায় রয়েছেন বিএনপির একক প্রার্থী ধানের শীষের এহেসান কুফিয়া। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে এখন ফাটল ধরেছে বলে মনে করেন এখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা; যা নির্বাচনের আগে কখনো ছিল না। নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিদ্রোহী প্রার্থীকে এবং বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নানাভাবে কটাক্ষ করে পরিবেশ অশান্ত করছেন বলে জানান রিটার্নিং অফিসার ইউএনও। আওয়ামী লীগের এমপির ভাই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই হচ্ছেন জগ প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী। আর এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের মাঝে দ্বন্দ্ব অনেকটা প্রকাশ্য রূপে চলে এসেছে। অন্যদিকে বিএনপির একক প্রার্থী এবং ২০ দলের শরিক কোনো প্রার্থী না থাকায় বেশ সুবিধায় রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষের এহেসান কুফিয়া। তবে জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী না থাকলেও কাকে ভোট দেবেন এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বলে জানান একাধিক নেতা। বাজিতপুর পৌরসভায় মোট ভোটার ২১ হাজার ৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৩৭৮ ও মহিলা ১০ হাজার ৬৫২ জন। মেয়র পদে চারজন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৭ জন। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১১ জন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আশরাফ (নৌকা), বিএনপির এহেসান কুফিয়া (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আকবর (জগ) ও ইসলামী আন্দোলনের মো. সেলিম খান (হাতপাখা)। তবে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর প্রচারণা চোখে পড়ার মতো নয়। এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি আফজাল হোসেনের ভাই আনোয়ার হোসেন আশরাফ এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সারোয়ার আলমের ভাই বর্তমান মেয়র শওকত আকবর দুজনই চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। আর এমপির ভাই মনোনয়ন পাওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এতে তারা নৌকার বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। একদিকে নৌকার প্রার্থী বলছেন তার পক্ষে দলীয় সব লোক কাজ করছেন, অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী বলছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও আমার সঙ্গে তৃণমূল নেতারা রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকেই বিদ্রোহী প্রার্থী শওকত আকবরের পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। বাজিতপুর আসনের আওয়ামী লীগের এমপি আফজাল হোসেন গ্রুপিংয়ের বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আশরাফ বলেন, আমি দলীয় প্রতীক পেয়েছি। এখন দলের সবাই আমার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী জগ প্রতীকের শওকত আকবর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এমপির লোকজন আমার প্রচারণায় বাধা-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিলেও তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকের বর্তমান মেয়র এহেসান কুফিয়া বলেন, আমার কর্মী-সমর্থকদের জায়গায় জায়গায় বাধা দিতেছে। এলাকায় এলাকায় গিয়ে আমার কর্মীদের বেছে বেছে হুমকি দিতেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে কিশোরগঞ্জের সবচেয়ে পুরনো পৌরসভা বাজিতপুর। পৌর এলাকার চারদিকে শুধু নৌকা, ধানের শীষ ও জগের প্রচারণা। পাল্লা দিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও প্রচারণা চলছে। সর্বত্র এখন শুধু পোস্টার আর পোস্টার। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীদের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে দেখা যায়। এ পৌরসভায় জাতীয় পার্টি ও জামায়াত কোনো নির্বাচনী কার্যক্রমে না থাকলেও তাদের ভোটের দিকে চেয়ে আছেন সব প্রার্থী। তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে জামায়াতের ভোট গেলেও জাতীয় পার্টির ভোট কোন দিকে যায় তা দেখার বিষয়। গতকাল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আশরাফকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে পৌরসভার চন্দ্রগ্রাম, মতলবপুর, ইব্রাহিমপুর, বটতলাসহ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করতে দেখা যায়। আশরাফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নৌকার পক্ষে এখন বাজিতপুরের মানুষ ভেদাভেদ ভুলে কাজ করছেন। নৌকার বিজয় শতভাগ নিশ্চিত। দলের বিদ্রোহী আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।

বিএনপির প্রার্থী এহেসান কুফিয়া সকাল থেকে পৌর এলাকার বটতলা, বাগুলপুর ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এহেসান কুফিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের এমপির প্রচারণা করার কথা না থাকলেও এখানে তা হচ্ছে প্রকাশ্যে। আমাদের ধানের শীষের কর্মীদের নানাভাবে বাধা দিচ্ছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শওকত আকবর গতকাল বাদনপুর, চন্দ্রগ্রামসহ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন না করলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন দেদার। তারা মোটরসাইকেল র‌্যালিও করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমার পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সব নেতা-কর্মী রয়েছেন।

এদিকে চেষ্টা করেও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. সেলিম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বাজিতপুর বাজারের ব্যবসায়ী মিজান বলেন, এইহানে আওয়ামী লীগের দুইজন প্রার্থী। এহন আমরা যে কোথায় ভোড দেই তার কোনো ঠিক নাই। একজন নৌকা আনলেও অন্যজন জগ আনেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, আশরাফ নৌকা পেলেও জয় হবে জগের। কারণ এখানে তৃণমূল নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান সারোয়ার আলমের জনপ্রিয়তা বেশি। আর তার ভাইও অনেক জনপ্রিয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শওকত বাজিতপুর কলেজের ছাত্রলীগ মনোনীত ভিপি ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

বাজিতপুর পৌরসভার নির্বাচনী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ জেড এম শারজিল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো অভিযোগ পেয়েছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশেষ করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানাও করেছি। তবে এখানে এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেওয়ায় ঝামেলাটা বেশি হচ্ছে। মাইকিং করে বলে দিয়েছি যেন এমনটা না হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর