শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

উগ্রপন্থি ব্রাদারহুডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নাম

বিলাতের রাজনীতি -১

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য থেকে

উগ্রপন্থি ব্রাদারহুডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নাম

কাগজেকলমে  ব্রিটেনে নেই জামায়াতে ইসলামীর কোনো কার্যক্রম। কিন্তু বিভিন্ন নামের সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে তারা এখানে সক্রিয়। বর্তমানে বাংলাদেশে যেমন জামায়াতে ইসলামী অনেকটা গা-ঢাকা দিয়ে আছে, ঠিক তেমনি ব্রিটেনেও একেবারেই তেমন। অন্তত ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যখন তুঙ্গে তখন এই দল ও তার অঙ্গ সংগঠনের রোজদিনকার কর্মসূচির তুলনায় তত্পরতা এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। সেসময় জামায়াত ছিল আলতাব আলী পার্কে, ছিল নাম্বার টেন ডাউনিং স্ট্রিটে, পার্লামেন্ট থেকে বিবিসির সামনে— সব জায়গাতেই জামায়াতে ইসলামী তার শরিক সংগঠন বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে যারপরনাই চেষ্টা করেছে যুদ্ধাপরাধী বিচারের ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অবস্থান আর জামায়াত-ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায় ওরা আপাতত রণেভঙ্গ দিয়ে আছে। প্রগতিশীল জোট মনে করছে, এটা জামায়াতে ইসলামীর কৌশলমাত্র। ১৭ ডিসেম্বর হাউস অব কমন্সে মুসলিম ব্রাদারহুড নামে ১১ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্টে জামায়াতে ইসলামীর নাম এসেছে দক্ষিণ এশিয়ায় কট্টরপন্থি মুসলিম সংগঠন হিসেবে। ৫০ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামী উপমহাদেশে ইসলামের নামে কীভাবে বিস্তার লাভ করে রিপোর্টে তার বর্ণনা রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, ব্রিটেনে ধর্মীয় মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং ধর্মীয় ঘৃণা ছড়াতে যেসব সংগঠন কাজ করছে তাদের প্রধান হোতা এবং সমন্বয়কারী হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার ইসলামী মৌলবাদী রাজনৈতিক নেতা আবু আলা মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুরুর দিকে ব্রিটেনে সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে এদেও তেমন কার্যক্রম চোখে না পড়লেও ১৯৯০ সালের দিকে ব্রিটেনের এসব ধর্মীয় সংগঠন সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। মুসলিম ব্রাদারহুড নিজেদের পর্দার আড়ালে রেখে বিভিন্ন নামে নানা দেশীয় মুসলিম কমিউনিটিতে ধর্মীয় সংগঠন তৈরি করে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। দক্ষিণ এশীয় মুসলমান কমিউনিটিতে এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেয় জামায়াতে ইসলামী এবং আবু আলা মওদুদীর অনুসারীরা। এর কয়েক বছর পরই গঠিত হয় ইসলামিক সোসাইটি অব ব্রিটেন (আইএসবি), মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব ব্রিটেন (এমএবি) এবং মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি)। ফিলিস্তিন এবং ইরাকে মুসলমানদের ওপর হামলা এবং নানা ধরনের ধর্মীয় ইস্যুকে পুঁজি করে ব্রিটেনের মুসলিম কমিউনিটিকে রাজনৈতিকভাবে একত্রিত করতে এমএবি ব্রিটেনের রাজনীতিতে খুব সক্রিয় হয়। হাউস অব কমন্সের এই নতুন প্রতিবেদন আপাতদৃষ্টিতে জামায়াতে ইসলামীকে মূলধারার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে। সেই রিপোর্টে উঠে এসেছে স্টুডেন্ট ভিসা, হাই স্কিল মাইগ্রেন্টে আসা জামায়াতের সদস্যরা কীভাবে ইস্ট লন্ডনসহ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক অনুসন্ধানে ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর প্রথম পাতায় রিপোর্ট হয় ‘জামায়াতের টাকায় ১১৫ ব্যারিস্টার লন্ডনে’। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, জামায়াতে ইসলামী কীভাবে ব্রিটেনে ব্যবসা-বাণিজ্য, মিডিয়া সর্বস্তরে বিস্তার লাভ করেছে। ব্রিটেনে দলের তেমন কোনো কর্মসূচি নেই কেন? জবাবে জামায়াতে ইসলামের ইউকে এবং ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, যতটুকু কার্যক্রম প্রয়োজন আমরা করছি। এখানে জামায়াতে ইসলামীর আনুষ্ঠানিক কোনো শাখা নেই, তবে জামায়াতকে যারা ভালোবাসেন তাদের নিয়ে আমরা বাংলাদেশের পক্ষে কিছু কাজ করি। হাউস অব কমন্সের রিপোর্টে উগ্রপন্থি মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নাম আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিপোর্টে জামায়াতে ইসলামীর নামে এমন কোনো নেতিবাচক কথা নেই, যা নিয়ে আমরা চিন্তিত হব। যে রিপোর্ট নিয়ে কথা হচ্ছে সেটা কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর, জামায়াতে ইসলামীর নাম প্রাসঙ্গিকভাবে এসেছে। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে ব্রিটিশ সরকার যোগাযোগ করত এবং আমরা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। তারা বলেছে, মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু এখানে জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো জঙ্গিবাদের অভিযোগ ব্রিটিশ সরকার করেনি এবং এই অভিযোগ করার কোনো বাস্তবসম্মত ভিত্তি নেই। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান খুব স্বচ্ছ।

সর্বশেষ খবর