শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
ফিরে দেখা-২০১৫ - আইনশৃঙ্খলা

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ব্লগার ও বিদেশি হত্যা ছিল আলোচনায়

আনিস রহমান

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ব্লগার ও বিদেশি হত্যা ছিল আলোচনায়

দুই বিদেশি হত্যা, একের পর এক ব্লগার ও প্রকাশক খুন, মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে বোমা হামলা, তাজিয়া মিছিলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা বছরজুড়েই ছিল আলোচনায়। এসব ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি যেমন বিনষ্ট করেছে তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতাকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ।

২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কূটনৈতিক জোন হিসেবে পরিচিত গুলশানে ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রংপুরের কাউনিয়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও। আলোচিত এই দুটি হত্যাকাণ্ডে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা বাড়ে কূটনীতিকদের। এ দেশে অবাধে ভ্রমণে কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দেয়।

গত বছর প্রায় একইভাবে একের পর এক মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারকে হত্যা করা হয়। পাঁচজন ব্লগারকে হত্যার দায় স্বীকারও করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি জঙ্গি সংগঠন। বছরের শুরুতে ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার ঘটনায় নতুন করে ষড়যন্ত্র দেখতে পায় দেশবাসী। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার অভিজিৎ রায়কে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওইদিন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা নিজেও গুরুতর আহত হন। অভিজিৎ হত্যা রহস্য উন্মোচন না হতেই ৩০ মার্চ সকালে রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন বেগুনবাড়ী এলাকায় খুন করা হয় আরেক ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে। অভিজিতের মতো তাকেও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১২ মে সকালে অফিসে যাওয়ার পথে সিলেটে আরেক ব্লগার অনন্ত বিজয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। অনন্ত একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করলেও প্রগতিশীল চিন্তাধারার লেখালেখি করতেন। হত্যার পর গোয়েন্দারা বলেছেন, জঙ্গি গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আর আনসারুল্লাহও হত্যার দায় স্বীকার করে বার্তা পাঠায়। জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ঘটে তিনটি হত্যাকাণ্ড। বাকি ছয় মাসে আরও দুটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এর মধ্যে ৭ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে খিলগাঁওয়ের পূর্ব গোড়ানে নিজ ফ্ল্যাটে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যার দায়ও স্বীকার করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর দিনের বেলায় প্রায় একই সময়ে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের প্রকাশক ও ব্লগার আহমেদ রশিদ টুটুল, তার বন্ধু রণদীপন বসু, তারেক রহিম এবং শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের ওপর হামলা করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দীপনকে মৃত ঘোষণা করেন। দীপন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে। ব্লগার হত্যাকাণ্ডের আতঙ্ক কাটতে না কাটতে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ধরন পাল্টে যায়। জঙ্গিরা বোমা হামলা করে শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ ও মহরমের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময়। এ দুটি ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া দিনাজপুরে ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউর মন্দিরের রাশ মেলায় যাত্রাগানের আসরে বোমা ফাটায় জঙ্গি গোষ্ঠী।

সর্বশেষ খবর