মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ডিপিডিসির টেন্ডার মূল্যায়নে কারসাজির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) ২৮টি ডিএসএস (ডিস্ট্রিবিউশন সাপোর্ট সার্ভিস) ও সিএসএস (কমার্শিয়াল সাপোর্ট সার্ভিস) টেন্ডার মূল্যায়নে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারসাজির মাধ্যমে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য ঘোষণা ও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী মহলের ইশারায় গুটিকয় প্রতিষ্ঠানকে বেশির ভাগ কাজ দিয়ে লুটপাটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গঠিত প্রকিউরমেন্ট রিভিউ কমিটির পর্যালোচনা  ও মতামতেও বিষয়টি উঠে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, মাস ছয় আগে ১৭টি সিএসএস ও ১১টি ডিএসএস কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করে ডিপিডিসি। নিয়মানুযায়ী টেন্ডার ডকুমেন্ট জমা দিতে প্রতি লটের জন্য ২৫ লাখ টাকা সম্পদ হিসেবে দেখাতে হয়। এখানে অনেক প্রতিষ্ঠান ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিলেও ডিপিডিসি তা ব্যাংকের চিঠির মাধ্যমে যাচাই না করে তাদের কাজ পাওয়ার যোগ্য ঘোষণা করেছে। অদৃশ্য কারণে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার পরও ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে ডিপিডিসির কাজলা শাখায় দরপত্র জমা দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানকে কারিগরিভাবে যোগ্য ঘোষণা করা হয়। অথচ তুচ্ছ কারণে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে ডিপিডিসিতে দীর্ঘদিন কাজ করা একাধিক অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে। অন্যদিকে সিএসএস কাজে ডব্লিউ-১ ফরমে টেন্ডার সিকিউরিটি ব্যাংক সনদ দেওয়ার বিধান থাকলেও দুটি প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক সনদ ছাড়াই কারিগরিভাবে যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো কোনো লটের ক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠান রেখে বাকি সবগুলোকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একই মালিকের একাধিক প্রতিষ্ঠানকে ভিন্ন ভিন্ন কাজ দিতে পূর্বে টেন্ডার জমাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের বায়োডাটা জমাদানের যে বিধান ছিল তা অ্যামেন্ডমেন্টের মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়েছে।

দরপত্র পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, ওই টেন্ডারে ঠিকাদারের মুনাফা অথবা ওভারহেডের কোনো ঘর রাখা হয়নি। ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানও দরপত্রে মুনাফার কথা উল্লেখ করেনি। প্রশ্ন উঠেছে, মুনাফা ছাড়া একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করবে কীভাবে। এক্ষেত্রে বিল আদায়ের সময় মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরির বিকল্প নেই বলে জানান একাধিক ঠিকাদার। এ ছাড়া এ ধরনের কাজে ভ্যাট ও ট্যাক্স সরকারি নিয়মানুযায়ী ৯ শতাংশ কাটা হলেও দরপত্রে তা ৮ শতাংশ ধরে টেন্ডার দাখিল করতে বলা হয়েছে। টেন্ডারে এসব অনিয়মের বিষয়ে ডিপিডিসি বোর্ডে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অভিযোগ দিলে বোর্ড কার্যাদেশ প্রদানের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে প্রকিউরমেন্ট রিভিউ কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি তাদের পর্যালোচনা ও মতামতে জানায়, টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জারিকৃত অনুশাসন আমলে নেয়নি। ভ্যাট, ট্যাক্স নির্ধারণের বিষয়টি ত্রুটিপূর্ণ মনে হয়েছে এবং ছোট ছোট ভুল সংশোধনের সুযোগ থাকলেও মূল্যায়ন কমিটি তা আমলে নেয়নি। এই টেন্ডার নিয়ে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। রিভিউ কমিটির আহ্বায়ক ও ডিপিডিসি বোর্ডের তৎকালীন পরিচালক আনসার আলী খান টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ত্রুটির সত্যতা স্বীকার করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি এলপিআর-এ চলে এসেছি। প্রতিবেদন দিয়েছিলাম গত নভেম্বরে। এখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। জানা গেছে, আগামী বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনায় উঠবে। তবে এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, রিভিউ কমিটির সুপারিশ আমলে না নিয়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ডিপিডিসি বোর্ডকে চাপ দিচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। এ ব্যাপারে জানতে ডিপিডিসি বোর্ডের দুজন পরিচালকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি। সূত্র জানায়, টেন্ডার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ডিপিডিসির কিছু কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠদের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে টেন্ডারে এসব অনিয়ম করা হয়েছে। ২৮টি টেন্ডার লটের মধ্যে ১৭টি কাজই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আর ওই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটির মালিক একই ব্যক্তি, বাকি দুটি তার ভাইদের নামে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জারিকৃত অনুশাসনে একই প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে দুটির বেশি কাজ না দিতে বলা আছে।

সর্বশেষ খবর