মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

তিন কারণে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার

আলী রিয়াজ

নতুন বছরের শুরুতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার। ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের সুদ হার কমাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপে গতি এসেছে সার্বিক লেনদেনে। গত এক বছর নিম্নমুখী থাকার পর জানুয়ারির শুরু থেকেই সূচক ও লেনদেন বাড়ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। ডিএসইর লেনদেন ২০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ছয়শ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দরই বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন স্থবিরতার পর শেয়ারবাজারে ফের গতি আসায় নতুন করে আশার আলো দেখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। শেয়ার দরের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিও বেড়েছে। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুবিধা প্রদান। জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাজারবান্ধব কিছু পদক্ষেপের ফলে শেয়ারবাজারে বেসরকারি তফসিলি ও মার্চেন্ট ব্যাংকের বিনিয়োগ বেড়েছে। রাজনীতি নিয়ে মানুষের যে আতঙ্ক ছিল সেটাও কেটে গেছে। এখন সব মিলিয়েই বাজারবান্ধব পরিবেশ রয়েছে। এ কারণে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক দেরিতে হলেও একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির হিসাব থেকে আলাদা করা হয়েছে। এটা আরও আগে করা উচিত ছিল। এ ছাড়া ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের সময় দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ কারণে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রেখে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সুবিধার কথা ঘোষণা করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলোকে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ আলাদা অ্যাকাউন্ট বা হিসাবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকের পেইড আপ ক্যাপিটাল বা পরিশোধিত মূলধন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসাব থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক স্থায়ী আমানতের সুদ হার কমে এখন ৬ থেকে ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। অন্যদিকে গত দুই বছর ধরেই জানুয়ারি মাসকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। কিন্তু এ বছর সেই আতঙ্ক থাকলেও বছরের শুরুতে চিত্র ছিল শান্ত। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল পর্যন্ত চলতি জানুয়ারির প্রতিদিনই লেনদেন বেড়েছে ডিএসইতে। বছরের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন ছিল সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। পরদিনই তা বেড়ে ৬০০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এরপর প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয়শ কোটি টাকায় লেনদেন হয়েছে। নিম্নমুখী শেয়ার দর ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে বেড়েছে সূচক। ২০১৫ সালে ডিএসইতে প্রায় চারশ পয়েন্ট সূচক হারালেও এ পর্যন্ত ৫০ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণে বাজারের মূলধনও বেড়েছে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আশার সঞ্চার হয়েছে। বাজার বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি। গত বছরের ডিসেম্বরে শেয়ারবাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৩০০ কোটি টাকার নিচে। কেবল ডিসেম্বর মাসেই সূচক হারায় প্রায় ১০০ পয়েন্ট।

সর্বশেষ খবর