জালিয়াতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেনে অতিরিক্ত চার্জ আদায় করে প্রায় ২ কোটি টাকা মুনাফা বেশি দেখিয়েছে যমুনা ব্যাংক। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সুইফট লেনদেনে ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা নির্ধারিত চার্জের অতিরিক্ত আদায় করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে অতিরিক্ত চার্জ নিয়ে মুনাফা বেশি দেখানোর বিষয়টি উঠে এসেছে। ব্যাংকটিকে বিধিবহির্ভূত চার্জ আদায় ও বেশি মুনাফা দেখানোর কারণ জানতে চেয়ে শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় ব্যাংকগুলোর আন্তর্জাতিক লেনদেনে সুইফট কোম্পানিকে দেওয়া চার্জের অতিরিক্ত গ্রাহকের কাছ থেকে না নিতে ২০০৯ সালে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুইফটের মাধ্যমে লেনদেনের ধরন ও পরিমাণভেদে ২০০ থেকে ১০০০ টাকা চার্জ নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু যমুনা ব্যাংক সুইফটের নির্ধারিত চার্জের চেয়ে বেশি আদায় করেছে। সেখান থেকেই অতিরিক্ত আয় দেখানো হয়েছে। যমুনা ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, লেনদেন করতে গিয়ে সুইফট কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত চার্জ পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের টেলিফোন, ইন্টারনেট বিলসহ বিভিন্ন ধরনের খরচ রয়েছে। লেনদেন সম্পন্ন করতে আলাদা কর্মকর্তাও রয়েছেন। এ জন্য নির্ধারিত চার্জের চেয়ে ব্যাংকের খরচ বিবেচনা করে সামান্য বেশি হারে চার্জ আদায় করা হয়েছে। সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যানশিয়াল টেলিকমিউনিকেশনস (সুইফট) হচ্ছে আন্তর্জাতিক লেনদেন সংস্থা। বিশ্বের ২০০ দেশের প্রায় ১১ হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুইফটের মাধ্যমে আর্থিক তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য ও সেবা-সংক্রান্ত তথ্য যেমন আদান-প্রদান করা যায়, তেমনি স্বল্প খরচে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ছয় মাসে যমুনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৪৬ কোটি টাকা। ২ কোটি বাদ দিলে হবে ১৪৪ কোটি। এতে প্রকৃত মুনাফাও কমে যাবে। ব্যাংকের হিসাবে নিট মুনাফা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। অতিরিক্ত চার্জ আদায় বিষয়ে ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে কারণ জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা কেন ফেরত দেওয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল আলম বলেন, ‘লেনদেনের জন্য নির্ধারিত চার্জ সুইফটকে দিতে হয়। এ খাত থেকে আয়ের সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ভুল বুঝে চিঠি দিয়েছিল। চিঠির জবাব দিয়েছি।’
