রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে রাজপথে অভিভাবকরা

হাইকোর্টে রিটের প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি স্কুলগুলোতে অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ বিভিন্ন স্কুলে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন অভিভাবকরা। একই প্রতিবাদে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিটের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলে আসা অভিভাবকদের এসব আন্দোলন সত্ত্বেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার। এমনকি অভিভাবকরা শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে স্মারকলিপি দিয়েও উল্লেখযোগ্য ফল পাননি। এ নিয়ে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুক্তভোগী বিভিন্ন স্কুলের অভিভাবকরা।

জানা গেছে, বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে আজ বিক্ষোভ করবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইল্স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ভিকারুননিসা, উইল্স লিটল ফ্লাওয়ারসহ কয়েকটি স্কুলের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করবেন তারা। ভিকারুননিসায় পড়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক গতকাল জানান, বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অভিভাবকরা ৮ নম্বর গেটে সংগঠিত হয়ে বিক্ষোভ করবেন। ১ নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভ মিছিলটি এসে একটি সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। অভিভাবকরা আজ লিফলেট বিতরণ, পোস্টারিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেবেন। উইল্স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়া শিক্ষার্থীর অভিভাবক রেহানা আক্তার শিল্পী বলেন, তাদের দাবির মধ্যে শুধু ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদ নয়, লেখাপড়ার মানোন্নয়ন, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, ভারপ্রাপ্ত বাদ দিয়ে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবি থাকবে। অভিভাবকরা বলছেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা ভর্তি নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত, বেতন বাড়ানোর পদ্ধতিটা কী হবে। ধাপে ধাপে বেতন বাড়লে আমাদের কোনো কথা নেই। কিন্তু হঠাৎ ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন দ্বিগুণ করা তো মেনে নেওয়া যায় না।’ জানা গেছে, দেশের বেসরকারি স্কুলে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন। এক লাফে ২০০ থেকে থেকে শুরু করে শ্রেণিভেদে হাজার টাকার বেশি বাড়ানো হয়েছে এ ফি। বর্ধিত এ ফি বাতিলে অভিভাবকরা দফায় দফায় আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। অভিভাবক ঐক্য ফোরাম বলছে, এক লাফে দ্বিগুণ বা এরও বেশি ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন আদায় মেনে নেওয়া যায় না। এর প্রতিবাদে উচ্চ আদালতে রিটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এ প্রসঙ্গে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতনের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে সংগঠনের পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, ‘এ নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিলে আমরা আদালতে যাব।’ জানা যায়, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণার পরই এ স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষকদের ‘বেতন দেওয়ার ধুয়া তুলে’ অস্বাভাবিক হারে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বৃদ্ধি করেছে রাজধানীর বেসরকারি স্কুলগুলো। নীতিমালায় ভর্তি ফি ও মাসিক বেতনের সীমারেখা উল্লেখ করা থাকলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই তা লঙ্ঘন করেছে। অথচ ভর্তি নীতিমালা ২০১৫-তে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা, আংশিক এমপিওভুক্ত ও এমপিওবহির্ভূত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নেওয়া যাবে। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। বর্ধিত ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন নির্ধারণে এ নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণিভেদে এ ফি বেড়েছে ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইল্স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিয়াম স্কুল, উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল, বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চবিদ্যালয়সহ প্রায় সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বাড়ানো হয়েছে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন। লাগামহীন এ ফি নির্ধারণ করার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। অভিভাবকদের ভাষ্য, প্রতিবছরই নানা অজুহাতে ‘ভুতুড়ে’ ফি আদায় করা হয়। শিক্ষার মান বাড়ানো না হলেও মাঝেমধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেতন বাড়িয়ে থাকে।

সর্বশেষ খবর