সোমবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদ আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদ আর নেই

সাংবাদিক নেতা ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ আর নেই। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।  তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং বহু ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বিশিষ্ট এই সাংবাদিক কিছুদিন ধরে মেরুদণ্ডজনিত অবশ রোগে ভুগছিলেন। গত বৃহস্পতিবার একই হাসপাতালে তার মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার আদায়ের বিভিন্ন আন্দোলনে আপসহীন নেতা আলতাফ মাহমুদের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে সারা দেশে সাংবাদিক সমাজে নেমে আসে শোকের ছায়া। শোকার্ত সহকর্মীরা তাকে এক নজর দেখার জন্য হাসপাতালে ছুটে যান। লাশ শেষবারের মতো জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আনা হলে সহকর্মী ও গুণগ্রাহীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতির স্মরণে সংগঠনের পক্ষে গতকাল থেকে ৩ দিনের শোক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ঢাকায় দুই দফা নামাজে জানাজা শেষে মরহুমের লাশ হেলিকপ্টারে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায় নেওয়া হয়। আজ সকালে জন্মস্থান ডাকুয়ায় শেষ জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে। আলতাফ মাহমুদের ৩৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় গত শতকের সত্তরের দশকে দৈনিক স্বদেশে। তিনি পর্যায়ক্রমে দৈনিক কিশান, দৈনিক খবরসহ বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও সাময়িকীতে কাজ করেন। সর্বশেষ দৈনিক ডেসটিনির নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। আলতাফ মাহমুদ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন। আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুসংবাদ শুনে তাত্ক্ষণিক হাসপাতালে ছুটে আসেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা ও তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এক শোকবার্তায় বলেন, সাংবাদিকতায় আলতাফ মাহমুদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার মতো একজন সিনিয়র সাংবাদিকের মৃত্যু দেশের সাংবাদিকতার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

প্রধানমন্ত্রী শোক বিবৃতিতে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও অন্যান্য সংকটকালে আলতাফ মাহমুদের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, তার মৃত্যু সাংবাদিকতা জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি। পেশাগত অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি ছিলেন আপসহীন ও অগ্রগামী সাংবাদিক নেতা। দেশ-জাতি তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন  জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে বিএফইউজে, ডিইউজে, ডিআরইউ, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন-ক্র্যাব, বাংলাদেশ সচিবালয় সাংবাদিক ফোরামের  নেতা শোক প্রকাশ করেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ)। দুপুর সোয়া ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা। আমাদের পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানিয়েছেন, আজ সকাল ১০টায় ডাকুয়া পৌরসভার ঈদগাহ মাঠে তার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে ডাকুয়ায় তার নিজ গ্রামে চতুর্থ ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠানের পর পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে। দুপুর পৌনে ২টার দিকে তার মরদেহটি অ্যাম্বুলেন্সে করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপেদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক আলতাফ মাহমুদের মরদেহ বহনকারী গাড়ির পেছনে পেছনে বিমানবন্দর পর্যন্ত যান। মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিকালে গলাচিপা হাইস্কুল মাঠে পৌঁছালে সেখানে অপেক্ষারত মানুষের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। অনেকে এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। মরদেহের সঙ্গে ছিলেন মরহুমের স্ত্রী তহমিনা মাহমুদ, মেয়ে, ছেলে ও পটুয়াখালী- ৩ আসনের এমপি আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন। ডিআরইউ ও জাতীয় প্রেসক্লাবে আলতাফ মাহমুদের জানাজায় অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, ড. হাছান মাহমুদ, আফজাল হোসেন, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, তথ্য সচিব গোলাম মর্তুজা, মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, একুশে টিভির মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূইয়া, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ্ আলমগীর, ডিআরইউর সভাপতি জামালউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, বিএফইজের একাংশের মহাসচিব সৈয়দ মেসবাহউদ্দিন, ডিইউজের একাংশের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম বকুলসহ, বিএফইজের একাংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুউদ্দিন হারুন ও মহাসচিব এম আবদুল্লাহসহ সিনিয়র সাংবাদিক, বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ও মামুনুর রশীদ আলতাফ মাহমুদের মরদেহে শেষশ্রদ্ধা জানান।

সর্বশেষ খবর