শিরোনাম
শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী এবার চীনা ভাষায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী এবার চীনা ভাষায়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে চীনা ভাষায় অনূদিত ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ইংরেজি, উর্দু ও জাপানি ভাষার পর এবার চীনা ভাষায় প্রকাশিত হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী। গতকাল বিকালে গণভবনে চীনা ভাষায় অনূদিত এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অনুবাদক চাই শি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী শুধু বাংলাদেশেরই নয়, এ উপমহাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বইটির বেশির ভাগ লেখা বঙ্গবন্ধু জেলে বসে লিখেছেন বলে জানান তিনি। এ সময় চীনা ভাষায় অনুবাদ করার জন্য অনুবাদক চাই শি ও তার সহযোগীদের ধন্যবাদ জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বক্তৃতা করেন অনুবাদক চাই শি, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন প্রমুখ। উল্লেখ্য, চাই শি বাংলাদেশে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চীনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে চীন সম্পর্কে কিছু লেখা আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, চীন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর আরও বিস্তৃ?ত লেখা পাওয়া গেছে। এ নিয়ে আলাদা একটা বই হবে। চীনের উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবাক লাগে উনি চীনের উন্নয়ন-অগ্রগতি নিয়ে যে কথা বলে গেছেন তা আজ বাস্তব। ১৯৫২ ও ’৫৭ সালে বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর লেখার পেছনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। আঞ্চলিক দারিদ্র্য বিমোচনে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এ অঞ্চলের (দক্ষিণ এশিয়া) মানুষের সমস্যা এক। এসব সমস্যার সমাধান সবাই মিলে করতে হবে। এ অঞ্চলের মানুষ দরিদ্র অবস্থা থেকে উঠে আসবে, এটাই ?আমাদের উদ্দেশ্য। চীনা ভাষায় অনূদিত এ বইটি বিক্রি করে যা আয় হবে তার সবটুকু বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে অনুদান হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দেন অনুবাদক চাই শি। বঙ্গবন্ধুকে ‘মহান নেতা’ উল্লেখ করে চাই শি বলেন, আমার কাছে মনে হয় আমি একটা ভালো কাজ করেছি। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরের সময় আমাকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী চীনা ভাষায় অনুবাদের কথা বলেন। আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিই, অবশ্যই আমি এটা করব। এটা করতে পারলে নিজেকে সম্মানিত মনে করব। বাংলাদেশকে নিজের ‘সেকেন্ড হোম’ মন্তব্য করে অনুবাদক বলেন, আমি বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে গেছি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সহজ কথা নয়। তিনি বলেন, কয়েক বছর পর বাংলাদেশে এসে দেখলাম অনেক উন্নয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে চাই শি বলেন, আপনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয় এবং ২০৪১ সালে উন্নত আয়ের দেশ হওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ, তা অর্জন সম্ভব। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, এ জাতিকে আলোর পথে, উন্নয়নের পথে এনেছেন বঙ্গবন্ধু। অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বইটি যিনি পড়বেন তিনিই অভিভূত হবেন।

কোরিয়া ও কুয়েতের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনীতি গতিশীল এবং সবার উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে সরকার কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এ জন্য সফটওয়ার ও হার্ডওয়ারসহ আইসিটি সম্পর্কিত রপ্তানিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। ইন্টারনেটসহ আইসিটি সুবিধা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। গতকাল সকালে তার কার্যালয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত অহন সেং-দু তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কুয়েতের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

শেখ হাসিনা তার কোরিয়া সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি দেশটির উন্নয়ন দেখে অভিভূত। তিনি কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে অবস্থানকালে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত তার দেশের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

বৈঠকে রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চৌকস নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতের উন্নয়নের ভূয়ষী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের নতুন মডেল হতে পারে। আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০২১ সালে উচ্চমধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। কোরিয়া বাংলাদেশের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসনসুবিধা নিশ্চিত করার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। কোরিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে এবং কঠোর পরিশ্রমী। কোরিয়ায় প্রায় ১৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছে।

পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আদিল মুহাম্মদ এ এইচ হায়াত। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে কুয়েতের আমির ও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রদূতকে বলেন, কুয়েত আমাদের হূদয়ে বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে কুয়েতের প্রশংসা করেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কুয়েতে আরও দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে চাই।

কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আদিল মুহাম্মদ এ এইচ হায়াত বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে আমি অভিভূত। বাংলাদেশকে তার ‘সেকেন্ড হোম’ উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে আদিল মুহাম্মদ বলেন, কুয়েতের কঠিন সময়ে বাংলাদেশ সহযোগিতা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমরা আপনার নেতৃত্বের মূল্য দিই।

সর্বশেষ খবর