মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

রইল বাকি পায়রা সেতু

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্ ও রাহাত খান, বরিশাল থেকে

রইল বাকি পায়রা সেতু

নদীর দেশ বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের প্রধান অন্তরায় নদী-খাল। রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সাগরকন্যা কুয়াকাটা কিংবা নির্মাণাধীন পায়রা সমুদ্রবন্দর যেতে মাত্র কয়েক বছর আগেও ছিল ফেরি বিড়ম্বনা। এখন দিন পাল্টেছে। একের পর এক নির্মিত হচ্ছে সেতু। ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা সড়কে গত কয়েক দশকে নির্মিত হয়েছে বুড়িগঙ্গা সেতু, শিমুলতলী সেতু, ধলেশ্বরী-১ ও ধলেশ্বরী-২ সেতু, শ্রীনগর সেতু, আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর হাজী শরীয়াতুল্লাহ সেতু, ভাঙ্গা সেতু, মোকসেদপুরের দিকনগর সেতু, টেকেরহাটের হ্যামিলটন সেতু, আমগ্রাম সেতু, সাধুর ব্রিজ, ঘটকচর ব্রিজ, মোস্তফাপুর সেতু, গোপালপুর সেতু, বরিশালের সন্ধ্যা নদীর ওপর মেজর এম এ জলিল সেতু (শিকারপুর), সুগন্ধা নদীর ওপর বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু, কীর্তনখোলা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া), পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শেখ কামাল সেতু, হাজীপুরে শেখ জামাল সেতু ও মহীপুরে শেখ রাসেল সেতু। শেখ কামাল ও শেখ জামাল সেতু এখনো যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি। অপরটি শেখ রাসেল সেতু কয়েক মাস আগে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ মাসের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু দুটিতে যানবাহন চলাচলের উদ্বোধন করতে পারেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা। এদিকে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর এবং কুয়াকাটা যেতে সবচেয়ে বড় অন্তরায় পদ্মা নদীতেও সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২০১৯ সালের মধ্যেই এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য শুরু হয়েছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। সে ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে সড়ক পথে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা যেতে বাকি রইল মাত্র একটি সেতু। বরিশাল এবং পটুয়াখালী জেলার সীমানা দিয়ে প্রবাহিত পায়রা নদীর লেবুখালী-দুধল মৌ পয়েন্টে এই সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে বন্দরকেন্দ্রিক যোগাযোগে বা পর্যটকদের বিড়ম্বনা পোহাতে হবে না। তারা কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই অনায়াসে সড়কপথে রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে সরাসরি পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা যেতে পারবেন। শুধু কুয়াকাটাই নয়, নির্মাণাধীন পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর হলেও এই সেতুটি (পায়রা সেতু) সড়ক পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু। সাগরকন্যা কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, বিশ্বে জাপান ছাড়া একই সঙ্গে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দর্শনের একমাত্র স্থান বাংলাদেশের কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। এখানে আগ্রহভরে সারা বছর অনেক দর্শনার্থী-পর্যটক আসেন। ফেরি যুগের অবসান ঘটিয়ে সেতু নির্মাণ হলে কুয়াকাটার প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ আরও বাড়বে। পাশাপাশি পর্যটনকেন্দ্রিক পরিকল্পিত উন্নয়ন হলে কুয়াকাটা হবে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় সমুদ্রসৈকত। পায়রা (লেবুখালী) সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আহমদ শরীফ সজিব বলেন, উন্নয়ন সহযোগী কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিকের (কেএফএইডি) অর্থায়নে পায়রা সেতু নির্মাণের চূড়ান্ত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পায়রা নদীর ওপর ১.৪৭ কিলোমিটার (১৪৭০ মিটার) দৈর্ঘ্য এবং ১৯.৭৬ মিটার প্রশস্ত সেতুর কাজ শুরুর জোর তত্পরতা চলছে বলে জানান তিনি। এই লক্ষ্যে সেতুর দুই প্রান্তে ০.৭ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করেছে। পায়রা সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক আহমদ সজিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা সেতু হবে চট্টগ্রামের তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর আদলে ‘এক্সট্রাডোজড কেবল স্টেট’ পদ্ধতিতে। সেতু নির্মাণের পাশাপাশি এর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য পায়রা নদীর দুই পাশে নদী শাসন, পটুয়াখালী প্রান্তে শিট পাইলিং এবং গাইড নির্মাণের কাজও এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত। প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৮২ ভাগ (ভ্যাট-আয়কর বাদে) দাতা সংস্থা কেএফএইডি এবং বাকি টাকার জোগান বাংলাদেশ সরকার নির্বাহ করবে বলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন। বরিশাল সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ইমদাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই শুরু হচ্ছে পায়রা (লেবুখালী) সেতুর কাজ। পদ্মা এবং পায়রা সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে পর্যটকরা বিনা বাধায় ভোগান্তি ছাড়াই সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা যেতে পারবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর