বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনে বাধা কেন্দ্র

মাহমুদ আজহার

বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনে বাধা কেন্দ্র

জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তার ভগ্নিপতি সাবেক মন্ত্রী সিরাজুল হক। তিনিও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। এ দুই নেতার দ্বন্দ্বে জেলা নেতৃত্বে সংকট। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও। মামুনের পেছনে সমর্থন জোগাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম। অন্যদিকে সিরাজুল হকের সঙ্গে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এস এম হালিম, সাবেক এমপি নিলোফার চৌধুরী মণি। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে জেলা বিএনপি বেহাল। কাউন্সিলের সময়ক্ষণও দেওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি এক পক্ষ গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। বেগম জিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দেন, দুই পক্ষের সমন্বয়ে কমিটি করে দিতে। দ্বন্দ্ব এখনো চলছে। একই অবস্থা লক্ষ্মীপুরে। সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই নেতার কারণে থমকে আছে জেলা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশই কেন্দ্রীয় নেতাদের কারণেই মূলত পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে সব কটি জেলায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানা সংকটে আপাতত ২০টি জেলায় কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা করছেন বিএনপির হাইকমান্ড। সম্প্রতি সিলেট মহানগর ও জেলার কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার ঝিনাইদহ জেলার কাউন্সিলও সম্পন্ন হয়েছে। গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, নোয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, কুষ্টিয়া, খাগড়াছড়িসহ বেশ কয়েকটি জেলায় মার্চের মধ্যেই কাউন্সিল সম্পন্ন করা হবে বলে জানা গেছে। সমস্যা থাকা জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড়, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ, ফরিদপুর, বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ, পিরোজপুর, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা ও মহানগর। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলা ভেঙে আহ্বায়ক কমিটিও হতে পারে। সাংগঠনিক জেলাগুলোর সংকট নিরসন করে কাউন্সিল করতে কেন্দ্রীয়ভাবে ১১ সদস্যের একটি টিমও গঠন করা হয়েছে। আগামী ২ মার্চের মধ্যে জেলাগুলো পুনর্গঠনের বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক জেলার নেতাকে অন্য জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রংপুর বিভাগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরীকে, বরিশালে আবদুল্লাহ আল নোমানকে, খুলনায় অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে ময়মনসিংহে, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল ও নেত্রকোনায়, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে, ড. এম ওসমান ফারুককে ঢাকা জেলা, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে এবং মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদকে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বরিশাল বিভাগের সব কটি জেলায় কম-বেশি সাংগঠনিক সংকট রয়েছে। পটুয়াখালীতে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যেই রূপ নিয়েছে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেনের। জেলার অবস্থা এতই সংকটে যে, কেন্দ্র থেকে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। পিরোজপুরে সভাপতি বাবুল আর সাধারণ সম্পাদক আলমগীর দুজনই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। এ দুই নেতার বিরোধ এতই চরমে যে, বিগত পৌরসভা নির্বাচনের ধানের শীষের প্রার্থী পর্যন্ত দিতে পারেননি তারা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া। ঝালকাঠিতে স্বেচ্ছায় সভাপতির পদ ছেড়ে দিলেও ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরই জেলার দেখভাল করছেন। তার সঙ্গে অনেকটা প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক নান্নুর। বরগুনায় জেলা বিএনপির সভাপতি ফারুক মোল্লার সঙ্গে বিরোধ চরমে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের। বরিশাল জেলা দক্ষিণে নয় সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে দেড় বছর ধরে। একই অবস্থা বরিশাল উত্তরেও। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের। ভোলা জেলা বিএনপিও অকার্যকর অবস্থায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের কারণে এসব জেলায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় জেলা সভাপতি ওয়াহিদুল বিশ্বাসের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুর ভাইয়ের দ্বন্দ্ব চলছে। কক্সবাজারে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের অনুপস্থিতির কারণে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের নিজ জেলায় বিএনপি কয়েক ভাগে বিভক্ত। বেগম জিয়ার হস্তক্ষেপই ওই জেলার স্থবিরতা কাটতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়ায়ও একই অবস্থা। সেখানেও শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্ব অনেকটা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। জেলা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছে না। কুমিল্লা দক্ষিণেও সাংগঠনিক সংকট রয়েছে। তবে কুমিল্লা মহানগর কমিটি হলে সাংগঠনিক দুর্বলতা কিছুটা কমে আসতে পারে বলে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করছেন। চাঁদপুর বিএনপির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন মানিকের সঙ্গে জেলার সাবেক সব মন্ত্রী-এমপির দ্বন্দ্ব রয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে নালিশও আসছে। জেলার শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। টাঙ্গাইলের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের সঙ্গে জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফার দ্বন্দ্ব সবারই জানা। জয়পুরহাটে মোজাহার হোসেন প্রধানের সঙ্গে সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয় বিগত পৌরসভা নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে আক্কেলপুর ও কালাইয়ে দুজনই পৃথক প্রার্থী দিয়েছিলেন। দুই নেতার কোন্দলের জেরে বিএনপির উর্বর ক্ষেত্র বলে পরিচিত এ জেলায় বিএনপি প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়। ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক কোন্দলে জর্জরিত। জেলার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারাই এ জন্য দায়ী বলে মনে করছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও কাজী মনিরের দ্বন্দ্বও সবার জানা। দুই নেতার দ্বন্দ্বে সাংগঠনিক বিপর্যয় এখন চরমে। মানিকগঞ্জে রীতা-শান্তর দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

সর্বশেষ খবর