বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিধি লঙ্ঘনে ইসির প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা থাকছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিধি লঙ্ঘনে ইসির প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা থাকছে না

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সংশোধিত বিধিমালা ও আচরণ বিধির কপি এখন নির্বাচন কমিশনের হাতে। তবে এই বিধিমালায় বেশ কিছু সংশোধনীও দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে ইউপি নির্বাচনে বিধি লঙ্ঘনের কারণে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করলে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করার বিষয়ে ইসির প্রস্তাব সংশোধন করে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউপি নির্বাচনের বিধিমালা এবং আচরণ বিধিমালায় আইন মন্ত্রণালয় কিছু সংশোধনী এনে গতকাল তা ভেটিং শেষে নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে।  চূড়ান্ত বিধিমালা পাওয়ার পরপরই এ নিয়ে বৈঠক করেছে কমিশন। এখন গেজেট প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশনের আইন শাখা। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ গেজেট প্রকাশ করা হবে। এরপর চার শতাধিক ইউপির নির্বাচনী তফসিল যে কোনো সময় ঘোষণা করা হবে বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জানা গেছে, ইউপি ছাড়া স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে বিধি লঙ্ঘনের অপরাধে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ইসির রয়েছে। তবে ইউপি নির্বাচনেও প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ইসির কাছে রাখার প্রস্তাব পাঠালে তা নাকচ করে দেয় আইন মন্ত্রণালয়। ইসি কর্মকর্তারা জানায়, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান নেই এবং আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অপরাধে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে। আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে কমিশনের প্রস্তাবিত বিধিমালায় অর্থদণ্ড কমানো হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাবেদ আলী (অব.) বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত বিধিমালা পেয়েছি। খুঁটিনাটি দেখে দ্রুত গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এরপরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এইচএসসি পরীক্ষার ফাঁকে ১১ থেকে ১২ দফায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফায় ৪০০ ইউপির তফসিল আগামী বৃহস্পতিবার বা রবিবার ঘোষণা করা হতে পারে বলেও জানান তিনি। ইসির কর্মকর্তা জানান, খসড়া আচরণ বিধিমালার ৩২ ধারায় বলা হয়েছিল, যে কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড বা লিখিত প্রতিবেদনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে এমন তথ্য পেলে তাত্ক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দেবে ইসি। তদন্তে অপরাধ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা সদস্যের প্রার্থিতা বাতিল করতে তাত্ক্ষণিক নির্দেশ দেবে ইসি। এদিকে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত পরিচালনা বিধিমালায় রাজনৈতিক দলের অপরাধে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় ভেটিংয়ে তা কমিয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর স্বপক্ষে যুক্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ধারা ২০(২) এ অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে। আইনের উক্ত বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে খসড়ায় সংশোধন করা হয়েছে। পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো যেসব ইউপিতে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে, সেখানে প্রার্থীও নির্বাচনী কার্যক্রমে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবে। কোনো রাজনৈতিক দল সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার বেশি অনুদান নিতে পারবে না এবং তা চেকের মাধ্যমে নিতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের সব ব্যয় ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। এসব বিধি লঙ্ঘন করলে অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে বিধিমালায়। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ বিবেচনায় ভোটের জন্য উপযুক্ত ইউনিয়ন বাছাই করে ধাপে ধাপে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হবে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ২৯ (৩) ধারা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। এ হিসাবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে সবগুলো ইউপির নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর